প্রচ্ছদ

কেন বিয়ে করলেন জানালেন মালালা

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু বাংলা: শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী পাকিস্তানের নারী অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই বিয়ে করেছেন। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের কর্মকর্তা আসের মালিককে জীবনসঙ্গী করেছেন তিনি। যদিও এর আগে বিয়ে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের জেরে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মালালা।

৯ নভেম্বর বিয়ের ঘোষণা দিয়ে টুইট করার পর সমালোচকরা মালালার পেছনে লেগেছে। তাকে নিয়ে রীতিমতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল হচ্ছে।

এই ট্রলের খোরাক মালালার আগের একটি মন্তব্য নিয়ে। গত জুনে ভোগ ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই তরুণী বলেছিলেন, ‘মানুষ কেন বিয়ে করে’। বিয়ের পর তার ওই মন্তব্য নিয়ে টুইটারে ঝড় চলছে।

বিখ্যাত মার্কিন ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগ-এর ব্রিটিশ সংস্করণের প্রচ্ছদে এক সাক্ষাৎকারে মালালা বলেছিলেন, আমি একটা ব্যাপার বুঝতে পারি না, মানুষকে কেন বিয়ে করতেই হবে। কাউকে জীবনে সঙ্গী করতে চাইলে কেন বিয়ের কাগজপত্রে সই করতে হবে। জীবনসঙ্গীকে বেছে নিতে হলে, কাগজে সই করার দরকার কী? এটা একটা পার্টনারশিপও তো হতে পারে।

বিয়ে নিয়ে নানান মন্তব্যের মধ্যে বিয়ে নিয়ে মুখ খুলেছেন মালালা। ফ্যাশনবিষয়ক জনপ্রিয় সাময়িকী ভোগের এক নিবন্ধে বিয়ের কারণ জানিয়েছেন তিনি। সেখানে আসার মালিকের সঙ্গে দেখা হওয়া, সময় কাটানো নিয়েও কথা বলেন তিনি।

১১ নভেম্বর ‘নিজের ভাষায় মালালার বিয়ে’ শিরোনামে ভোগে মালালার নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে মালালা বিয়ে নিয়ে বলেন, ‘আমি একজন সেরা বন্ধু ও সঙ্গী খুঁজে পেয়েছি।’ তার ভাষ্যমতে, এবার সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিয়েকে দেখেছেন তিনি।

আগের সাক্ষাতকারেও মালালার আরেকটি উক্তি ছিল এরকম— বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়া পর্যন্ত আমি ভাবতাম কখনও বিয়ে করব না। কিন্তু তখন আমি বুঝিনি যে মানুষ চিরকাল একরকম থাকে না, তার পরিবর্তন হয়।

ভোগের প্রবন্ধে মালালা বলেন, আমি বিয়ের বিরুদ্ধে ছিলাম না। আমি প্রথাটি নিয়ে সর্তক ছিলাম। আমি পুরুষতান্ত্রিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। পাশাপাশি বিয়ের পর নারীদের নানা বিষয়ে আপসের প্রস্তুতি নিতে হয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিয়েসংক্রান্ত আইনগুলোতে সাংস্কৃতিক প্রথা ও নারীবিদ্বেষী মনোভাবের প্রভাব পড়ে তা নিয়ে কথা বলেছিলাম।

তার এ দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে পাকিস্তানের কাটানো শৈশব অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে বলে জানান মালালা।

কেন বিয়ে করলেন, সে প্রশ্নের জবাব রয়েছে মালালার লেখায়। তিনি বলেন, তার বন্ধুবান্ধব, পরামর্শদাতা, এমনকি স্বামী আসার মালিকও এ নিয়ে বোঝাপড়া করতে পাশে ছিলেন। তিনি বুঝতে পারেন পুরুষতান্ত্রিকতা ও দমন–পীড়নের বাইরে গিয়েও বিবাহিত সম্পর্ক টিকে থাকতে পারে। মালালা জানান, সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি বিয়েকে দেখেছেন।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার মেয়ে মালালা ইউসুফজাইয়ের জন্ম ১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই। নারী শিক্ষার বিরোধী তালেবান জঙ্গিদের এলাকায় বসে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার পক্ষে বিবিসি ব্লগে লেখালেখি করে তিনি যখন পশ্চিমা বিশ্বের নজর কাড়েন, তখন তার বয়স মাত্র ১১ বছর।

নারী শিক্ষার পক্ষে কথা বলায় তাকে পড়তে হয় প্রাণনাশের হুমকির মুখে। ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর সোয়াত উপত্যকার মিনগোরাত এলাকায় ১৪ বছর বয়সি মালালা ও তার দুই বান্ধবীকে স্কুলের সামনেই গুলি করে তালেবান। পাকিস্তানে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করে বুলেট সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হলেও পরে যুক্তরাজ্যের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে তাকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওই ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে, মালালার স্বপ্ন সফল করতে ২০১২ সালের ১০ নভেম্বরকে ‘মালালা দিবস’ ঘোষণা করে জাতিসংঘ।

তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানে ফিরতে না পারলেও মালালা যুক্তরাজ্যে থেকে তার লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন। পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, জর্ডান, সিরিয়া ও কেনিয়ার মেয়েদের শিক্ষার সহায়তায় গঠন করেন মালালা ফান্ড।

২০১৩ সালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিয়ে বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘চরমপন্থিরা বই আর কলমকে ভয় পায়। তারা নারীদের ভয় পায়। তালেবানরা ভেবেছিল বুলেট দিয়ে আমাদের স্তব্ধ করে দেবে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে।’

পরের বছর ভারতের শিশু অধিকার কর্মী কৈলাস সত্যার্থীর সঙ্গে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান মালালা, যিনি এখন যুক্তরাজ্যেই থাকছেন, লেখাপড়া শেষ করেছেন অক্সফোর্ড থেকে।

আরো পড়ুন:

আফগানিস্তানে নারী ক্রিকেট দলের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *