খোকন কুমার রায়:
“দুঃসময়ে গেলো চাকরি, কী আর হবে বলে, সন্তান কাঁদে অনাহারে, ভাসি চোখের জলে।”
কী নিষ্ঠুর, কত অমানবিক! এই চরম দুঃসময়ে চাকুরিচ্যুতি!
অবাক হয়ে যাই রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক এই দুঃসময়ে কিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ কর্মরত শ্রমিক ও চাকুরিজীবীদের ছাঁটাই করে। বিগত কিছুদিন যাবৎ দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন মিডিয়া কর্মী, গার্মেন্টস শ্রমিক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের হঠাৎ করে চাকুরিচ্যুত করা হচ্ছে।
একে তো এই লকডাউনের সময়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে, তার মধ্যে আবার চাকুরিচ্যুতি। অনেক প্রতিষ্ঠানই ছাঁটাইকৃত কর্মীদের প্রাপ্য বকেয়া বেতনাদিও পরিশোধ করেনি।
এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের মালিকগণের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিলে দেখা যাবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এরা অনেকেই সম্পদের পাহাড়ের চূড়ায় বসে আনন্দ আয়োজন ও বিলাসিতায় জীবন কাটাচ্ছে। এদের কোনো মন নেই, নেই মানবিক চেতনাবোধ। মনে হয় আরাম-আয়েশে সমস্ত কিছু বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সম্পদের চূড়ায় বসে এরা মনে হয় মানুষের হাহাকার দেখতে পায় না, প্রাচুর্যে অন্ধ ও বধির হয়ে গেছে। এরা শ্রমিকের কষ্ট দেখতে পায় না। শুধু ধান্ধা, আরো সমৃদ্ধি, আরো বিলাসিতা। এদের বিলাসিতা ব্যয়ের কিছু অংশ বরাদ্দ করলেও অসংখ্য শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করা যায়।
সময় এসে গেছে এদের সম্পদের হিসাব নেয়ার, যেখানে মিশে আছে লাখো শ্রমজীবী মানুষের রক্ত, ঘাম।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছিলেন যে, এই চরম দুঃসময়ে কাউকে চাকুরিচ্যুত করা যাবে না এবং প্রদেয় বেতন-ভাতাদির জন্য প্রয়োজনীয় প্রণোদনা বরাদ্দও তিনি দিয়েছেন। কিন্তু এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে যারা কর্মীদের ছাঁটাই করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া মানবিক দাবি এবং আশা করছি গণমানুষের নেত্রী সেই ব্যবস্থাটি করবেন।
এখন প্রয়োজন ‘মানুষ মানুষের জন্য এবং জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভূতি’র। যেসব মালিকগণ সহানুভূতি না দেখিয়ে, বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে হঠাৎ করে চাকুরিচ্যুত করেছে তারা মানুষ নয়, দানব।
এ সকল দানবদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শ্রমজীবীদের রক্ত ও ঘামের দাবি।
জয় হোক খেটে খাওয়া মানুষের, জয় হোক করোনা বিধ্বস্ত বঙ্গ জনপদের।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, ধূমকেতু.কম।