স্বাস্থ্য

করোনা হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠলেই মুক্তি পেতে পারে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মনে করেন, এই সংক্রমণ যদি অব্যাহত থাকে তাহলে “হার্ড ইমিউনিটি” না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। “হার্ড ইমিউনিটি- অর্থাৎ কিছু লোক মারা যাবে, এবং অনেক মানুষ ইমিউন (প্রাকৃতিকভাবে ভাইরাস প্রতিরোধী) হয়ে যাবে।”

মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠলে তবেই এই ভাইরাস থেকে ব্যাপক সংক্রমণের আশঙ্কা চলে যাবে বলে তিনি মনে করছেন। তবে এখানে সতর্ক হবার কারণও রয়েছে বলে তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।

“এই ভাইরাস যদি এর মধ্যে মিউটেট করে (আচরণ পরিবর্তন করে), তাহলে কিন্তু তা নাও হতে পারে। কারণ মিউটেট করলে সেটা নতুন ভাইরাসে পরিণত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিন তৈরির যে প্রক্রিয়াটা চলছে, সেটা আবার তখন কাজে লাগবে কি না তাও জানা নেই,” ব্যাখ্যা করেছেন অধ্যাপক ইসলাম।

বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়েছিল দুই মাস আগে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মোট শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯২৯ জনে।

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ৭৮৬, যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক শনাক্ত হওয়া রোগী।

বাংলাদেশে করোনভাইরাস মহামারির প্যাটার্ন বা আক্রান্তের সংখ্যা নির্দেশকারী গ্রাফে এর ওঠানামার চিত্রটা দেখলে দেখা যাবে, ২০ এপ্রিল ৪৯২ জনের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। তারপর দৈনিক আক্রান্তের এই হার ওঠানামা করে এখন ৭শ’র কোঠায় পৌঁছেছে।

মাঝে এই সংখ্যা ৫০০র ঘরে ছিল, এখন তা সাতশ’র ঘরে এসে গেছে। দিনে দিনে এই কার্ভটা উপরের দিকে উঠছে। সমস্ত ইনফেকটেড লোকের ৫৫% ঢাকা সিটিতে। আর সব আক্রান্তের ৮৭% ঢাকা বিভাগে।

ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল বলেন, বিশেষ করে ঢাকায় সংক্রমণের বিষয়টা ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলেই তার মনে হচ্ছে। “ইনফেকশনটা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে, সেটা যে সহসা কমবে তার কোনো লক্ষণ নেই।“

তিনি বলেন, গত ২৮ এপ্রিল গার্মেন্টস খুলে দেয়া হয়েছে এবং এর কী প্রভাব পড়বে তা আমরা পাওয়া শুরু করব ১২ মে থেকে। দোকানপাটও এতদিন বন্ধ থাকার পর খুলে দেবার যে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, অধ্যাপক ইসলাম মনে করছেন তার প্রভাবে এই গ্রাফ আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে।

এই আশঙ্কা কাটবে কবে?

সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশের মানুষও গভীর উদ্বেগ নিয়ে অপেক্ষা করছে কবে তারা এই শঙ্কামুক্ত হবে। লকডাউনের মধ্যে গার্মেন্টস খুলে দেবার একটা প্রভাব ফেলতে পারে সংক্রমণের হারের ওপর – মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার মানে হলো কৃত্রিম উপায়ে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। তবে কেউ যদি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে থাকে তাহলে স্বাভাবিক নিয়মে তার শরীরে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে।

অধ্যাপক নজরুল ইসলামের মতে, এই ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটির ওপর ভরসা করেই থাকতে হবে। কারণ তিনি বলছেন, বাংলাদেশে উচ্চ মানের লকডাউন আরোপ করা সম্ভব না।

“আমরা চেষ্টা তো করলাম এক মাস ধরে। পারছি না তো। সবাই চেষ্টা করেছে। পুলিশ চেষ্টা করেছে, আর্মি চেষ্টা করেছে, ভলান্টিয়াররা চেষ্টা করেছে। আমরা পারছি না।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই রোগ মোকাবেলার একমাত্র উপায় যে, মানুষের মধ্যে ইমিউনিটি তৈরি হওয়া, সরকারকে সেটা মানতে হয়ত বাধ্য হতে হবে। অধ্যাপক ইসলাম বলেন, আমেরিকা বা ইতালিতে কর্তৃপক্ষ যেভাবে লকডাউন কার্যকর করতে পারে, বাংলাদেশ সেভাবে এই লকডাউন কার্যকর করতে পারছে না।

“বাংলাদেশে মানুষজনের যে আচরণের ধরন আর বাংলাদেশ সরকারের যে সক্ষমতা, এই দুটা যদি আপনি চিন্তা করেন, তাহলে বাংলাদেশের সরকার এইরকম আচার-ব্যবহারওয়ালা জনগোষ্ঠিকে প্রকৃতভাবে লকডাউন করাতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।”

অধ্যাপক ইসলাম বলছেন, সরকার অবশ্যই চেষ্টা করছে, কিন্তু তিনি মনে করেন “সরকারের সক্ষমতার একটা থ্রেসহোল্ড আছে অর্থাৎ এর বেশি সরকার সক্ষম না।”

তিনি বলছেন, সে কারণেই সংক্রমণের হার দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছে, যদিও বাড়ার হার কম, কিন্তু তিনি বলছেন গ্রাফে সংক্রমণের হার স্থিতিশীল মাত্রায় আসছে না বা গ্রাফে সংক্রমণটা সমান্তরাল রেখায় পৌঁছেছে তেমনটা দেখা যাচ্ছে না।

অধ্যাপক ইসলাম বলছেন, গার্মেন্টস খোলার পর এবং দোকানপাট খুলে দেবার পর ১২ই মে থেকে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তবেই বোঝা যাবে এই গ্রাফ সমান্তরাল রেখায় পৌঁছে, সেখান থেকে নিচের দিকে নামার কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে কি না।

“সেটাই হবে আমাদের আলটিমেট অবস্থা। এরপর আমাদের আর করণীয় কিছুই নেই। গ্রাফ যদি তখনও ওঠানামা করতে থাকে তাহলে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই, যদি না এর মধ্যে কোনো ভ্যাকসিন চলে আসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *