স্বাস্থ্য

করোনা মোকাবেলার ব্রত নিয়ে পালিত হলো বিশ্ব চিকিৎসক দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: বিশ্ব চিকিৎসক দিবস আজ। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দু’বছর ভিন্ন পরিবেশে পালিত হচ্ছে দিবসটি। করোনাকালে এবারে এই দিনটির গুরুত্ব কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। চিকিৎসা সেবা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ডাক্তার-রোগীর সম্পর্ক হচ্ছে এ দিবসের অন্যতম প্রধান বিষয়।
জীবন বাজি রেখে রোগী সেবার ব্রত ধারণ করে করোনা মোকাবেলায় দায়িত্ব পালন করে চলেছেন চিকিৎসকেরা। লকডাউন থাকায় দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশের সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শুভেচ্ছা বিনিময়সহ সীমিত পরিসরে অনলাইন ভিত্তিক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনা সভায় দেশের বিভিন্ন স্তরের প্রখ্যাত চিকিৎসকরা অংশ গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন(বিএমএ) জানায়, ১৯৩৩ সালের ৩০ মার্চ এই দিবসটি পরিচিতি পায়। এ সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে প্রথম এ দিবসে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ডাক্তার-রোগীর সম্পর্কের ব্যাপারটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। ১৯৯০ সালে ৩০ অক্টোবর মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ (সিনিয়র) সেদেশে ৩০ মার্চকে জাতীয় ডাক্তার দিবস পালনের জন্য আইন পাস করেন। 
যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৪২ সালের ৩০ মার্চ শল্য চিকিৎসায় প্রথম ইথার অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহার করেছিলেন ডা. ক্রফোর্ড ডব্লিউ লং। ঘটনাটি স্মরণীয় করে রাখতে সেই দিনটিকেই তারা বেছে নিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ডাক্তারি পেশাটাকে সম্মান জানানো। সেবা দিয়ে রোগীদের সারিয়ে তোলা এসব মহৎ মানুষদের কার্ড, ছোট উপহার কিংবা সংবর্ধনা ইত্যাদি দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। তবে উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশে এক জুলাই চিকিৎসক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
সকল চিকিৎসককে শুভেচ্ছা ও তাদের শুভ কামনা জানিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের(বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দু’বছর ভিন্ন পরিবেশে পালিত হচ্ছে দিবসটি। করোনাকালে এবারে এই দিনটির গুরুত্ব কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে।
চিকিৎসা সেবা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ডাক্তার-রোগীর সম্পর্ক হচ্ছে এ দিবসের অন্যতম প্রধান বিষয়। জীবন বাজি রেখে রোগী সেবার ব্রত ধারণ করে করোনা মোকাবেলায় দায়িত্ব পালন করে চলেছেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসকদের মনোবল চাঙা রাখা, সাহস ধরে রাখার সব ধরনের উদ্যোগ রাষ্ট্র ও সমাজের পক্ষ থেকে নিতে হবে। মহামারি পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু পদক্ষেপ চিকিৎসকদের বিব্রত করেছে, অনেক চিকিৎসক ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সব ধরনের সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসকসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মান দিতে হবে।
প্রত্যেক চিকিৎসকের সুস্বাস্থ্য ও শুভ কামনা জানিয়ে বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের(স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ ধূমকেতু ডটকমকে জানান, করোনাকালে শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বে চিকিৎসক, নার্স, স্টাফরা যে একনিষ্ঠ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের বর্তমান অবস্থা আসলে কাউকে বোঝানোর মতো নয়। এটা কেবল যারা প্রত্যক্ষ করছেন তারাই বুঝতে পারবেন। গত বছরের মার্চ-এপ্রিল থেকে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছি। সীমাহীন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের লড়াই এখনো চলছে। ইতোমধ্যে অনেক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন, তবে কাজ থামাননি। আমরা চিকিৎসক। আমরা জানি, যে কোনো বিপর্যয়ে মানুষকে সেবা দিয়ে যেতে হবে। সে শপথ নিয়েই আমরা চিকিৎসক হয়েছি।
তবে আশঙ্কার বিষয় হলো, সম্প্রতি চিকিৎসকদের করোনায় আক্রান্তের হার অনেক বেড়ে গেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল চিকিৎসকের সুস্বাস্থ্য কামনা করেন ডা. এম এ আজিজ।
সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৬৫৪টি এবং এসব হাসপাতালে মোট শয্যার সংখ্যা ৫১,৩১৬টি। আর বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৫,০৫৫টি, যেখানে মোট শয্যার সংখ্যা ৯০,৫৮৭টি। সরকারি স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত মোট চিকিৎসকের সংখ্যা বর্তমানে ২৫,৬১৫ জন। আর চিকিৎসক, সেবিকা ও নানা পর্যায়ের হাসপাতাল কর্মী মিলে মোট জনবল কর্মরত রয়েছেন ৭৮,৩০০ জন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে নিবন্ধিত মোট চিকিৎসকের সংখ্যা ৯৩,৩৫৮ জন। আর নিবন্ধিত দন্ত চিকিৎসকের সংখ্যা ৯,৫৬৯ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *