পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, করোনা মহামারি থেকে পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার একটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে অবশ্যই এমন একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে হবে- যেখানে জাতি, গোত্র, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই অর্থবহভাবে অবদান রাখতে পারি। পূর্বের থেকেও ভালো অবস্থায় ফিরে যাওয়ার লক্ষ্যে কোভিড পরবর্তী পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে শান্তির সংস্কৃতিকে ধারণ ও লালন করার কোনো বিকল্প নেই। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত শান্তির সংস্কৃতি বিষয়ক জাতিসংঘের উচ্চতর ফোরামে প্রদত্ত স্বাগত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কোভিড পরবর্তী পুনরুদ্ধার কার্যক্রমসমূহের অন্তর্ভুক্তি এবং প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য অর্জনের বিষয়টি আরও এগিয়ে নিতে শান্তির সংস্কৃতি যে রূপান্তরধর্মী ভূমিকা পালন করতে পারে তা তুলে ধরা হয় উচ্চপর্যায়ের এ ফোরামে। দিনব্যাপী আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে উদ্বোধনী পর্ব ছাড়াও একটি প্লেনারি সেশন এবং ভার্চুয়াল প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রদত্ত বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ ধারণাটি উপস্থাপন এবং ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতি বছর সর্বসম্মতিক্রমে তা রেজুলেশন হিসেবে গৃহীত হওয়া এবং ২০১২ সাল থেকে উচ্চপর্যায়ের ফোরাম আয়োজন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। উদ্বোধনী পর্বে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি, ইউএন অ্যালায়েন্স ফর সিভিলাইজেশনের উচ্চ প্রতিনিধি, জাতিসংঘ মহাসচিবের শেফ দ্য কেবিনেট এবং ইউনেস্কোর প্রতিনিধি।
কোভিড থেকে স্থিতিশীল পুনরুদ্ধারে শান্তির পরিবেশ বিনির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় শান্তির সংস্কৃতিকে মূলভাগে স্থাপন করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মহামারী থেকে সফল পুনরুদ্ধারের জন্য অবশ্যই বৈশ্বিকভাবে টিকাদান কর্মসূচির বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তিনি ভ্যাকসিনের জাতীয়করণকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেন এবং বিশ্বকে এ ধরনের ভ্যাকসিন বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে বিকালে “শান্তির সংস্কৃতিতে সিভিল সোসাইটি সংস্থাসমূহের অংশগ্রহণ” বিষয়ক একটি ভার্চুয়াল প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়; যা সঞ্চালনা করেন জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এতে প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের রেজুলেশন ‘ডিক্লারেশন অন দ্য কালচার অব পিস অ্যান্ড প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন’ অনুযায়ী প্রতি বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির আহ্বানে শান্তির সংস্কৃতি বিষয়ক জাতিসংঘ উচ্চপর্যায়ের ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়; যার আয়োজন করে বাংলাদেশ। প্রতি বছর বাংলাদেশ আনীত এই রেজুলেশনটিতে বিপুলসংখ্যক দেশ সহ-পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে এবং এটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে সদস্য দেশগুলোর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রী ও সিভিল সোসাইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
/জেড এইচ