স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্যবিধি মানলে লকডাউন দরকার হবে না : স্বাচিপ মহাসচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না বলে উল্লেখ করেছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ। তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারের আন্তরিকতার কমতি নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু সরকারি নির্দেশনাসমূহ বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিধি পালনে সাধারণ মানুষের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

ধূমকেতু ডটকমকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, এত বিধিনিষেধ বা লকডাউনের পরও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। লকডাউন বা বিধিনিষেধ দেওয়ার পরও জনস্রোত কিন্তু থামানো যাচ্ছে না। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও জনগণ ভেঙে ভেঙে কিংবা বিকল্প পরিবহনে ঢাকায় আসা-যাওয়া করছে। জরুরি সেবা ও পণ্য পরিবহন ছাড়া কোনো যানবাহনই চলবে না, সেটা কিন্তু হচ্ছে না। মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি বা বিকল্প পরিবহনে ঢাকায় আসছেই। সেই প্রেক্ষাপটে এই লকডাউন কতটুকু কার্যকর, তা বোধগম্য নয়।

স্বাস্থ্যবিধি মানলে লকডাউনের প্রয়োজন হবে না উল্লেখ করে স্বাচিপ মহাসচিব বলেন, করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দেশের সীমান্তবর্র্তী জেলা দিয়ে এখন ঢাকাসহ সারা দেশেই ছড়িয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে প্রথম লকডাউন দেওয়া হয়। স্থানীয় প্রশাসনকে এটা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলায়ও লকডাউন দেওয়া হয়। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে সংক্রমণ বাড়ার পর এসব জেলাতেও লকডাউন দেওয়া হয়। তাই লকডাউন বা বিধিনিষেধকে হঠাৎ করে কিংবা অস্বাভাবিক বলা যাবে না।

তিনি বলেন, সব সময় সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলা হচ্ছে। মাস্ক পরার কথা বলা হচ্ছে। সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় লকডাউন দেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটেই মূলত ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে লকডাউন দেওয়া হয়। এটাও সত্য যে, করোনা নিয়ে মানুষের এখন ভয়ভীতি কমে গেছে। তাছাড়া লকডাউন না মানার সংস্কৃতিও আমাদের আছে। এটা শুধু বাংলাদেশেরই নয়, সারা বিশ্বেই এই সংস্কৃতি আছে।

অধ্যাপক এম এ আজিজ বলেন, তারপরও মানুষকে লকডাউন সম্পর্কে আরও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের সচেতন করতে হবে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ সব জনপ্রতিনিধিকে এতে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একইভাবে জনসাধারণের যেমন স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা আছে, পাশাপাশি যারা না মানবে তাদেরও সংক্রমণ বিধির আইনে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে। এত কিছুর পরও দেশ সংক্রমণ ঝুঁকিতে পড়ছে। দেশ ভারত পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনের প্রয়োগও জরুরি। গণটিকাদান কর্মসূচি আরও জোরদার করতে হবে। এ জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। টিকা কীভাবে আনা যায় সেই তৎপরতা বাড়াতে হবে।

করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, সামান্য অসচেতনতায় জীবনে নেমে আসতে পারে বড় দুর্ঘটনা। সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি পালন করলে আমরা অনেকাংশেই করোনার থাবা থেকে রেহাই পেতে পারি। সাধারণ মানুষ সহযেগিতা না করলে সরকারি উদ্যোগ, এমনকি টিকা দিয়েও সংক্রমণের হার কমানো যাবে না। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *