স্বাস্থ্য

করোনার নমুনা পরীক্ষায় পরিবর্তন এনেছে আইইডিসিআর

ধূমকেতু প্রতিবেদক: করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় পরিবর্তন এনেছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। শুধু বিদেশ ফেরত নয়, তাদের সংস্পর্শে আসা মানুষদেরও নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

শুক্রবার (২৭ মার্চ) প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, প্রথমদিকে যারা বিদেশ থেকে এসেছেন অথবা করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসেন, শুধু তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে এখন কেবল তারা নয়, বিদেশ ফেরতদের সংস্পর্শে আসাদেরও নমুনা পরীক্ষা করছে আইইডিসিআর।

তিনি আরও জানান, ৬০-এর বেশি বয়স এবং দীর্ঘমেয়াদি অসুখে ভুগছেন এমন কারও যদি করোনার লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয়, তবে তাদেরও নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

নিউমোনিয়া রোগীদের ব্যাপারে সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, কী কারণে নিউমোনিয়া হয়েছে সেটা ডায়াগনসিস করা যায়নি এমন রোগীদের নমুনাও পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে যেতে হয় এমন মানুষের উপসর্গ দেখা দিলে, তাদেরও নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

আইইডিসিআর বলেন, পরীক্ষার ভিত্তিতে আমরা দেখতে চাই বাংলাদেশে কোথাও কোনও সংক্রমণ রয়েছে কিনা। আর যেহেতু ঢাকা থেকে অনেকে বাইরে চলে গেছেন, তাই জেলা পর্যায়েও হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। যেন জেলায় যারা গেছেন তাদের মধ্যেও লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে নমুনা সংগ্রহ করে অতি দ্রুত বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানো যায়।

তিনি বলেন, শুরু থেকে রোগের বিস্তারকে বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। ধীরে ধীরে রোগের যত বিস্তার ঘটছে, সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিকে পরবর্তী ধাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছি।

তিনি জানান, প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শুরুর দিকে আইইডিসিআরে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছিল, কিন্তু এখন রোগের বিস্তারের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরেও একটি সমন্বিত কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে।

সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, কোনও সহযোগিতার জন্য আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বর ছাড়াও মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য বাতায়ন এবং জেলা পর্যায়ে হটলাইন নম্বরে যোগাযোগের জন্য বলা হয়েছে। আপনাদের যোগাযোগ ও তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু রোগের বিস্তার বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই আইইডিসিআরের বাইরেও পরীক্ষা করার প্রয়োজন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজ (বিআইটিআইডি)-এ পরীক্ষা শুরু হয়েছে এবং নমুনা পরীক্ষাও করা হয়েছে। এছাড়াও ঢাকার জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা শিশু হাসপাতালে পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীর নমুনা হাসপাতালগুলোতেই সংগ্রহ করা হবে এবং তারাই আমাদের কাছে পাঠাবে, যাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আইইডিসিআর কর্মীদের নমুনা সংগ্রহ করতে বিলম্ব না হয়।

হটলাইন নম্বরে যোগাযোগে সমস্যা হচ্ছে বলে হটলাইন নম্বরও প্রসারিত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নম্বর বাড়ানোর পাশাপাশি দুটি হান্টিং নম্বর করা হয়েছে। তা হলো—১৯৪৪৩৩৩২২ এবং ১০৬৫৫। এই দুই নম্বরে যোগাযোগ করলে আমাদের লোক সেখানে চলে যাবে।

৬০-এর বেশি যাদের বয়স এবং যাদের দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা রয়েছে তাদের অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে জানিয়ে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, একদম নিজের ঘর হতে বের হবেন না। সেইসঙ্গে হাত মেলানো এবং কোলাকুলি থেকে বিরত থাকবেন।

এর আগে তিনি জানান, দুই চিকিৎসকসহ দেশে আরও ৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪৮ জনে।

মৃত্যুর সংখ্যা না বাড়লেও শুক্রবার সকালে অনলাইনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআরের মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, সেবা দেয়া ছাড়াও কমিউনিটি থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসকরা। দেশে সীমিত আকারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে বলে আজ আবারও জানান তিনি।

দেশে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৫ জন মারা গেছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১১ জন। আর, আক্রান্ত ৪৮ জনের অবস্থা স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে আইইউিসিআর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *