ধূমকেতু প্রতিবেদক: করোনা রোগীদের জন্য তৈরি ওষুধ ‘রেমডিসিভির’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে হস্তান্তর করেছে বেক্সিমকো। আজ বৃহস্পতিবার (২১ মে) ওষুধটি হস্তান্তর করা হয়েছে। বেক্সিমকো উৎপাদিত ইনজেকশন আকারে তৈরি রেমডিসিভিরের ব্র্যান্ড নাম হলো “বেমসিভির”। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে আজ এক হাজার ভায়াল বেমসিভির হস্তান্তর করা হয়েছে।
এটি সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে। বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন বলেন, যেহেতু সরকার কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করছে তাই আমরাও সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে এই ওষুধটি সরবরাহ করবো। সরকার যখনই চাইবে তখনই আমরা ওষুধটি দেবো।
তবে এমনিতে প্রতিটি ইনজেকশনের দাম ৫,০০০-৬,০০০ টাকা পড়বে বলে জানান বেক্সিমকো ফার্মার চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা। তিনি আরো জানান, প্রতিযোগী অন্যান্য ওষুধ কোম্পানিও একই দাম রাখছে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একজন রোগীর ৫ থেকে ১১ ডোজ ওষুধ লাগবে বলেও জানান রাব্বুর রেজা।
ওষুধটি হস্তান্তরের সময় জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত জটিল ও মুমূর্ষু রোগীদের আরোগ্যের ক্ষেত্রেই বেক্সিমকোর তৈরি রেমডিসিভির অধিক কার্যকর হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন এমপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে ওষুধ হস্তান্তর করেন।
অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব মোঃ আলি নুর, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ মাহবুবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ এবং কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত সকলে মহামারী করোনা মোকাবেলায় বেক্সিমকো ফার্মার গৃহীত উদ্যোগসমূহের প্রশংসা করেন।
নাজমুল হাসান বলেন, কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ওষুধটি আনার ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম জেনেরিক কোম্পানি হতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। নানাবিধ প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, নতুন মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার এই ওষুধটি উৎপাদন মূলত যুগান্তকারী আবিষ্কারসমূহকে সহজলভ্য করার আমাদের অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন। সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সহযোগিতার কারণেই স্বল্পতম সময়ে রোগীদের জন্য এই ওষুধ নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। এজন্য তাদের প্রতি আমরা সবিশেষ কৃতজ্ঞ।
সামাজিক দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা সরকারের কর্মকান্ডে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদানের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।
তিনি বলেন, মহামারী করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জন্য বিশ্বের সর্বাধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেক্সিমকো ফার্মা সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলছে। নিজস্ব আধুনিক গবেষণা ও উৎপাদন সক্ষমতার আলোকে, নতুন এই মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণে বেক্সিমকো ফার্মা অঙ্গীকারাবদ্ধ। বেক্সিমকো ফার্মা ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯ চিকিৎসায় আরেকটি এন্টি-ভাইরাল ওষুধ ফেভিপিরাভির (ব্র্যান্ড নাম: ভিরাফ্লু) এবং কোভিড চিকিৎসায় ব্যবহৃত ও সম্ভাবনাময় ওষুধ এন্টিম্যালারিয়াল হাইড্রোক্সিক্লোরকুইন (ব্র্যান্ড নাম: কোভিসিন) ও এন্টি-প্যারাসাইটিক ইভারমেক্টিন (ব্র্যান্ড নাম: ইভেরা) উৎপাদন শুরু করেছে।
কোভিড-১৯ এ গুরুতর অসুস্থ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর ক্ষেত্রে রেমডিসিভির ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় রেমডিসিভির ব্যবহারে কোভিড-১৯ আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের দ্রুততম সময়ে সুস্থ হয়ে উঠার প্রমাণ মিলেছে। জাপান সরকারও কোভিড-১৯ এ গুরুতর অসুস্থ রোগীর ক্ষেত্রে জরুরি চিকিৎসা হিসেবে রেমডিসিভির ব্যবহারের বিশেষ অনুমতি দিয়েছে।
বাংলাদেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী, বেক্সিমকো ফার্মা শুধুমাত্র কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতাল সমূহেই রেমডিসিভির (বেমসিভির) সরবরাহ করবে, কোনো ফার্মেসিতে সরবারাহ করবে না। ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রাপ্তির প্রথম দিনেই বেক্সিমকো ফার্মা বিপুল পরিমাণে রেমডিসিভির (বেমসিভির) কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য অনুদান হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করে।