শিল্প ও বাণিজ্য

করোনাকালে বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাকাটা বেড়েছে ৩০০ গুণ || নতুন কর্মসংস্থান ৫০ হাজার তরুণের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: করোনার এই দীর্ঘ মহামারীকালে মানুষ হয় ঘরবন্দী থাকছে নয়তো বিশেষ প্রয়োজনে চলাচল করছে সতর্কতার সাথে। বহু মানুষ আছেন একান্তই অপরিহার্য না হলে ঘর থেকে বেরই হচ্ছেন না। কিন্তু তাদের কাঁচাবাজার, অন্যান্য কিচেন আইটেম, গৃহস্থালীর নানারকম পণ্য, জামা-কাপড় এসব প্রয়োজনীয় কেনাকাটা তো আর বন্ধ থাকছে না। এসবের জন্য মানুষ এখন নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে ই-কমার্স সাইটগুলোর ওপর। সারা বিশ্বব্যাপী একই চিত্র।   

করোনার এই সময়ে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতে রেকর্ড পরিমাণ– প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। মহামারীর সময়ে অনলাইনে নিত্যপণ্যের কেনাকাটা বেড়েছে তিনশ’ গুণ। তৈরি হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার তরুণের নতুন কর্মসংস্থান।

মহামারীর নেতিবাচক প্রভাবে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন টিকে থাকার লড়াই করছে, তখন বিশ্বব্যাপী ই-কর্মাস খাত ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার তৈরি করেছে। বিশ্বের সব অনলাইন জায়ান্টদের ব্যবসা বেড়েছে কয়েকগুণ। বলা হচ্ছে, মহামারী অনেক কিছু কেড়ে নিলেও, অনলাইন ব্যবসাকে দিয়েছে আরো বেশি।

গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মহামারীর সময়ে বিস্তৃত হয়েছে ই-কর্মাস। ১১ বছর ধরে যেখানে ই-কমার্সের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ, মহামারীর বছরে তা ছাড়িয়েছে ৮০ শতাংশের ঘর।

অনলাইনভিক্তিক ব্যবসা আর উদ্যেক্তাদের প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ- ই-ক্যাব বলছে, “অনলাইন কেনাকাটায় চাহিদার সবার উপরে ছিল মুদি পণ্য, সবজি-মাছ-মাংস থেকে শুরু করে- বেড়েছে ফ্রোজেন ফুড কেনাকাটা। অনলাইনে ইলেকট্রনিক পণ্য যেমন মানুষ কিনেছে, তেমনি আকার বড় হয়েছে ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের। সেবাগ্রহীতার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশই করেছেন ডিজিটাল লেনদেন। আর এই প্রেক্ষাপটেই তৈরি হয়েছে নতুন প্রায় ৫০ হাজার কর্মসংস্থান।”

তবে শহরকেন্দ্রিক এ সাফল্যকে দেশের সব প্রান্তে ছড়াতে সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়োজন দেখছেন ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার। তিনি বলেন, “যদি অনলাইন কেনাকাটা সুবিধা বিভিন্ন জেলা শহর থেকে উপজেলায় নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে এক্ষেত্রে বড় ধরণের উন্নতি হবে।” শমী কায়সার বলেন, “শুধু শহরেই ই-কর্মাসের যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সেটি সারাদেশে সমভাবে বিস্তৃত হলে প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরণের উন্নতি হবে। এজন্য, উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের সহায়তা দিতে ই-ক্যাবও প্রস্তুত”।

এদিকে, ই-কমার্স সম্প্রসারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নিয়ন্ত্রকের পাশাপাশি সহায়কের ভূমিকায় দেখতে চান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, “ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টের বড় সমস্যার সমাধান করতে হবে। দেশের ই-কমার্সকে টেকসই করতে হলে এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নজর দিতে হবে।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পেপাল যখন আসলো তখন তার জন্য রেগুলেশন ছিল না। ধীরে ধীরে প্রয়োজন অনুযায়ী পলিসি নেওয়া হয়”। পলক মনে করেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক যে রেগুলেটরের কাজ করছে, তার পাশাপাশি ফ্যাসিলেটরের ভূমিকা পালন করতে হবে।” তিনি আরো জানান, “এরইমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ই-কমার্সসহ প্রযুক্তির খাতগুলোতে ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে, পাশাপাশি তরুণ উদ্ভাবকদের জন্য ৪ শতাংশ সরল সুদে পাঁচশ’ কোটি টাকার স্টার্টআপ ফান্ড দিয়েছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *