মাতৃভূমি

করোনাকালে নারী নেতৃত্ব গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: সারা বিশ্বেই হাজারো অসংগতির মধ্যেও পুরুষের পাশাপাশি সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখে চলেছেন নারীরা। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকে এ পর্যন্ত যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, সবখানেই নারীর সরব নেতৃত্ব রয়েছে। যদিও তাদের নেতৃত্বের পথটি কোনোকালেই সুগম ছিল না; তবু তারা কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে পিছিয়ে থাকেননি। বাংলাদেশ আজ নারী নেতৃত্বের রোল মডেল।

বিগত বছরে করোনার মতো মহামারি মোকাবিলায়ও বিশেষ অবদান রেখেছে নারী নেতৃত্ব। যে দেশের নেতৃত্ব যত দক্ষ ও জোরালো ছিল, সেই দেশ তত সহজে মহামারি মোকাবিলা করতে পেরেছে। এ ক্ষেত্রে সারা বিশ্বেই এগিয়ে রয়েছে নারী নেতৃত্বাধীন দেশশুলো। বাংলাদেশ, জার্মানি, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও তাইওয়ানের মতো দেশগুলো করোনা মোকাবিলায় যে সফলতা দেখিয়েছে, তা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মহামারি মোকাবিলায় এই সফল নারী নেত্রীদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফোর্বস ম্যাগাজিন।

আন্তর্জাতিক প্রতিপাদ্যের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশে এ বছর নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে—‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’।

বাংলাদেশের নারীরা নানা বাধা ভাঙছেন এবং পেশায় সফল হচ্ছেন। বর্তমানে দেশের সংসদনেতা, সংসদীয় উপনেতা, বিরোধী দলীয় নেত্রী ও স্পিকার নারী। নারীরা এখন উচ্চ আদালতের বিচারক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং আরো অনেক কিছু হয়ে উঠছেন। আজ ২ কোটি নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে নিয়োজিত রয়েছেন এবং ৩৫ লাখেরও বেশি নারী তৈরি পোশাক খাতে কাজ করছেন, যা আমাদের বৃহত্তম রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্র। এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার নারী সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন করেছেন। নারীরা এখন রেলগাড়ি চালাচ্ছেন আবার গাড়িও চালাচ্ছেন। এয়ারফোর্সে নারীরা ভালো করছেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন নারীরা। মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী বা স্বার্থান্বেষী যুদ্ধবিরোধীরা ছাড়া সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। ফলে নারীর অবদান অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। নারী মুক্তিযুদ্ধে দুইভাবে যুদ্ধ করেছেন—প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। নারীর যাত্রাপথ সরল নয়। হোক যুদ্ধদিনে বা স্বাভাবিক সময়ে। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ১৯৪৮ সাল থেকেই শুরু হয়েছিল। তখন থেকেই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন নারী। করেছেন সাংগঠনিক কাজ, থেকেছেন রাজপথে। সেই বায়ান্নর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে নারীই প্রথম পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ১৪৪ ধারা অমান্য করে মিছিল-সমাবেশ করেছিলেন। পুলিশের লাঠিচার্জ ও গুলিতে এদের অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছিলেন। অনেক নারী গ্রেফতারও হয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ১৪ জন নারী আইন পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬০ সাল থেকে সক্রিয় হতে শুরু করে গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি, ওয়ারী মহিলা সমিতি, আপওয়া, নিখিল পাকিস্তান সমাজকল্যাণ সমিতি। ১৯৬৪ সালে সুফিয়া কামাল, সনজিদা খাতুন, রোকেয়া রহমান কবীরের মতো নারী নেত্রীরা দাঙ্গাবিরোধী কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে ৫০০ ছাত্রী সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *