অভিমত

করোনাকালেও জনগণের পাশে থেকেছে সম্প্রীতি বাংলাদেশ

তাপস হালদার:

‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ব্ঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে সকল ধর্ম-বর্ণের শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের একত্রে কাজ করার এটি একটি প্লাটফরম। এ সংগঠনে ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী-পেশার কোনো বিভেদ নেই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর প্রতিষ্ঠিত সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ একটি সংগঠন এটি। অন্য সংগঠনগুলো থেকে এখানেই এই সংগঠনটির স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য।

গঠনমূলক কাজের মধ্য দিয়ে খুব অল্প সময়েই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘পথ হারাবে না বাংলাদেশ’, ‘আমার ভোট আমি দেব, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে দেব’ শিরোনামে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করতে সারা দেশে জাগরণ সৃষ্টি করে সম্প্রীতি বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীকে ঘিরে তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছে টিম সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

বৈশ্বিক করোনার সময়কালে সারা বিশ্বই স্থবির। এতদিন পর্যন্ত শারীরিক দূরত্ব মেনে জনগণের সাথে সরাসরি কোনো প্রোগ্রাম করার সুযোগ কারোরই ছিল না। কিন্তু করোনা মহামারীও গতিরোধ করতে পারেনি সম্প্রীতি বাংলাদেশের কার্যক্রমে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছেন সেই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে করোনা মহামারীর পুরোটা সময়ই জনগণের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছে সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার শুরুর দিকেই ৮৭ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সমন্বয়ে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করে সম্প্রীতি বাংলাদেশ, যেটা এখনও চলমান আছে। মানুষ যখন লকডাউনে ঘর থেকে বের হতে পারতো না, তখন ঘরে বসে বিনামূল্যে টেলিমেডিসিন সেবা জনগণের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।

করোনাকালে সম্প্রীতি বাংলাদেশ’র সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকর অনুষ্ঠান হলো ‘সম্প্রীতি সংলাপ’। প্রতি শনিবার রাত ৯টায় সরাসরি সম্প্রীতি বাংলাদেশের ফেইসবুক পেজে লাইভ সম্প্রচারিত হয়ে থাকে অনুষ্ঠানটি। এছাড়াও বিশেষ বিশেষ দিবসে বিশেষ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সুযোগ্য আহবায়ক শ্রদ্ধেয় পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এর মনোমুগ্ধকর উপস্থাপনা দর্শক হৃদয়ে নতুন আড়োলন সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও সংগঠনের সদস্য সচিব বরেণ্য চিকিৎসক ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের প্রতিটি অনুষ্ঠানে সাবলীল সূচনা বক্তব্যে অনুষ্ঠানটিতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।

বিগত এক বছরে বিভিন্ন শিরোনামে সংম্প্রীতি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংলাপগুলো হলো- ‘বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক দর্শন’, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন-আজ মম জন্মদিন’, জননেত্রী শেখ হাসিনার কারাবরণ দিবস, জননেত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস, শেখ কামাল-হে বন্ধু, হে প্রিয়, ‘শেখ রেহানা: আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়’, স্মরণে-শ্রদ্ধায় বঙ্গমাতা, ১৫ আগষ্ট স্মরণে- শোক আর সন্তাপ পেরিয়ে, ২১ আগষ্ট রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের এক কালো অধ্যায়, কুৎসিত ইন্ডেমনিটি, আজকের সব ফুল রাসেলের জন্য, অসাম্প্রদায়িক বাংলা ও বাঙ্গালী, বিজয়ের পথে চূড়ান্ত যাত্রা, আমরা তোমাদের ভুলবো না, গৌরব ও আনন্দের বিজয়, বিজয়ের পথ ধরে, রবীন্দ্র জয়ন্তী, স্মরণে শহীদ জননী, করোনাকালের বাজেট, সাত দশক পেরিয়ে আওয়ামী লীগ, দেশজুড়ে সম্প্রীতি-উৎসব, সম্প্রীতির এই দেশে, সম্প্রীতির শারদীয়া, ষড়যন্ত্র পিছু ছাড়ে না।

করোনার শুরু থেকেই মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সম্প্রীতি বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে। সেজন্য করোনার সচেতনতাকে গুরুত্ব দিয়েও অনেকগুলো সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেমন- করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক, করোনা নিয়ে আমরা কতটা প্রস্তুত!, করোনাকালে দেশ ও মানুষ, অস্থিরতা নয় স্থিতিশীলতাই কাম্য, করোনা কোন পথে, সেকেন্ড ওয়েব, সচেতন হই সুন্দর থাকি, নো মাস্ক নো সার্ভিস, ভ্যাকসিন মৈত্রী, ভ্যাকসিনের ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়া।

দেশ-বিদেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের মহাপ্রয়াণেও সম্প্রীতি সংলাপের মধ্য দিয়ে তাঁদেরকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে সম্প্রীতি বাংলাদেশ। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের অকৃতিম বন্ধু শ্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহম্মদ নাসিম, সেক্টর কমান্ডার জর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত ও কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সাংবাদিক রাহাত খানের মহাপ্রয়াণে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছে সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

সম্প্রীতি সংলাপের একটি বিশেষ পর্বে ছিল ‘বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা- স্বাস্থ্য অর্থনীতি ও জাতীয় উন্নয়ন’ শিরোনামে উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী প্রসাদ শেঠী’র স্মারক বক্তব্য। ‘বিজয়ের পথ ধরে’ শিরোনামে আরেকটি বিশেষ পর্বে প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।

দেশ-বিদেশের যে সকল বিদগ্ধজন সম্প্রীতি সংলাপে অংশগ্রণ করে সংলাপকে প্রাণবন্ত ও গঠনমূলক করতে সহযোগিতা করেছেন তাঁরা হলেন- প্রথিতযশা সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক(কৃষিমস্ত্রী), আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান, ডা: মো এমানুর রহমান(ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী), ডা: মুরাদ হাসান (তথ্য প্রতিমন্ত্রী), বিচারপতি শামসুদ্দিন চোধুরী মানিক, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, এ্যারোমা দত্ত এম.পি, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী সিকদার(অব:), অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান, অধ্যাপক আ.ব.ম. ফারুক, রামেন্দু মজুমদার, রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় (বিধায়ক, পশ্চিমবঙ্গ), প্রথিতযশা ডা. অভিজিত চৌধুরী (ভারত), সমীর কুমার মিত্র (সাবেক বি.এস.এফ উপ-প্রধান), সায়েন্টিস্ট ডা. এম. কে. ভট্টাচার্য (ভারত), সংক্রামণ ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. মুন্সী মঈন উদ্দিন (ওহাইও, যুক্তরাষ্ট্র), বিগ্রেডিয়ার (অব) এস. কে. চ্যাটার্জী (ভারত), অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, সাবেক রাষ্ট্রদূত এ কে এম আতিকুল ইসলাম, সাবেক সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ, সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি এম নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. উত্তম বড়ুয়া, নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান, সাংবাদিক অজয় দাসগুপ্ত, বাচিক শিল্পী ড. ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায়, সাংবাদিক আলী হাবিব, সমাজ বিজ্ঞানী সাইদুর রহমান, অধ্যাপক ডা: মাহবুবুর রহমান বাবু, অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, মারুফা আক্তার পপি, অধ্যাপক বিমান চন্দ্র বড়ুয়া, সাংবাদিক সুকান্ত গুপ্ত অলক, বরুণ ভৌমিক অলক, দিল্লীর সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল, কলকাতার সাংবাদিক অনিন্দ্য জানা, সাংবাদিক হারুন হাবীব, অধ্যাপক জাকির হোসেন, রেভারেন্ট মার্টিন অধিকারী, শিক্ষাবিদ অঞ্চল চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা মিহির কান্তি ঘোষাল, সমাজকর্মী হেলাল উদ্দিন, নাট্য নির্মাতা সাইফ উদ্দিন, সাংবাদিক বেলাল আহমেদ, সাংবাদিক বিপ্লব পাল, কলামিষ্ট অনয় মূখার্জী।

করোনাকালে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আরেকটি সফল কার্যক্রম হলো টেলিমেডিন সেবা। ডাঃ সুনান বিন ইসলাম ও ডাঃ মাসুদ আলমের সঞ্চালনায় প্রতি বুধবার একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অনলাইনে সরাসরি পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই অনুষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক ডাঃ মো শারফুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডাঃ মো. আবদুল আজিজ, অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া, অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, অধ্যাপক ডাঃ মাহবুবুর রহমান বাবু, অধ্যাপক ডাঃ নুজহাত চৌধুরী, অধ্যাপক ডাঃ হারিসুল হক, অধ্যাপক ডাঃ সংযুক্তা সাহা, ডাঃ আসগর আলী মন্ডল, ডাঃ বেদৌরা জাবীন, ডাঃ এম এ রহীম, ডাঃ মশিউর রহমান খসরু, অধ্যাপক ডাঃ রুকসানা রায়হান, ডাঃ নীলুফার ফাতেমা, ডাঃ রোকসানা বেগম, ডাঃ সাব্বির আহমেদ খান, ডাঃ ইশরাত জাহান ইলা, ডাঃ সমরেশ চন্দ্র সাহা, ডাঃ হারুন আর রসীদ ইয়াসিন, ডাঃ হরিদাশ সাহা (প্রতাপ), ডাঃ এম সাইফুদ্দিন, ডাঃ আলী নাফিসা, ডাঃ জাহেদ পারভেজ, ডাঃ মোঃ শাহাদাত হোসেন, ডাঃ নুসরাত সাবরিন চৌধুরী, ডাঃ শওকত হোসেন (রোমেল), ডাঃ রুহ-ই-জাকারিয়া, ডাঃ কে.এম মামুন মোর্শেদ, ডাঃ গোবিন্দ চন্দ্র রায়, ডাঃ শারমিন আক্তার, ডাঃ শিউলি চৌধুরী, ডাঃ শাহারানা আরজু, ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হক দুলাল, ডাঃ জাকিউর রহমান, ডাঃ এম.এ রহিম, ডাঃ এস.এম গোলাম কাওসার প্রমুখ।

সরকার যখন ঘোষ করলো ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ সম্প্রীতি বাংলাদেশ তখন বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করে সচেতনতা সৃষ্টিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবগুলোতে সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে সংম্প্রীতি বাংলাদেশ।

করোনা সম্প্রীতি বাংলাদেশের কার্যক্রমকে স্থবির করতে পারেনি। বরং প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্প্রীতি বাংলাদেশের কার্যক্রম দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। শুধু অনলাইন প্লাটফরমের মধ্য দিয়েই প্রায় পনের লক্ষ মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করতে পেরেছে সম্প্রীতি বাংলাদেশ। আজ সম্প্রীতি বাংলাদেশের অনলাইন কার্যক্রমের শততম পর্ব। শুভ হোক সংম্প্রীতি বাংলাদেশের জয়যাত্রা।

লেখক: সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও সাবেক ছাত্রনেতা।

ইমেইল: haldertapas80@gmail.com

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *