বীরেশ চন্দ্র বর্মন :
যখন করোনা ভাইরাস মহামারীটি প্রথম আঘাত হানে, আমরা প্রায় অপ্রস্তুত ছিলাম কিভাবে এই প্রাণঘাতী মহামারীর মোকবেলা করবো। যখন আমি এটা লিখতে বসেছি ইতোমধ্যেই আমরা প্রায় এই মহাদুর্যোগের দেড় বছর পার করেছি। এখন সারাবিশ্বের মানুষকে করোনা টিকা দেওযার, নেওয়ার মহাপরিকল্পনা চলছে। ইতোমধ্যেই উন্নত দেশগুলো প্রথম ডোজ টিকা নেয়া সম্পন্ন করে দ্বিতীয় ডোজের টিকাও সম্পন্ন করতে চলেছে। বাকি অন্যদেশগুলো এবং বাংলাদেশ করোনা টিকার সংকট কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে।
যাইহোক, আমার লিখার বিষয়বস্তু করোনা টিকা কেন্দ্রিক নয়। খুব শীঘ্রই হয়তো বিশ্বের সব মানুষ টিকার আওতায় এসে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ধারায় ফিরে আসবে। কিন্তু গত দেড় বছরে আমরা যে নতুন অভ্যাসগুলো আয়ত্ত করেছি নিজের সুরক্ষা ও সুস্থতার জন্যে, তার সুফল হতে পারে সুদূরপ্রসারি।
সারা বিশ্বে যখন লকডাউন, শাট ডাউনের মত প্রতিবন্ধকতাগুলো আমাদের সামনে এসেছে আমরা আমাদের জীবনযাত্রায় নানামুখী পরিবর্তন নিয়ে এসেছি। বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার ১৫-২০ মিনিট হাঁটার দূরত্ব গণপরিবহন এড়িয়ে পায়ে হেঁটে চলেছি। সু স্বাস্থের জন্য হাঁটার উপকারিতা সবার জানা। রেঁস্তোরায় গিয়ে শরীরের জন্য ক্ষতিকর খাবার খাওয়া পরিহার করেছি। অযথাই বাইরে ঘুরাঘুরি না করে নিজের অত্যাবশকীয় জরুরী বিষয় গুলো জেনেছি সন্তান,বাবা মা সর্বোপরি পরিবার কে গুরুত্ব দিয়েছি। নিজেদের কাজ যেমন সকালের নাস্তা বনানো,বাসায় বাগান করা, শারীরিক ব্যায়ামের মত উপকারি অভ্যাস গড়ে তুলেছি। সারাদিনের জন্য নিজের এবং পরিবারকে সময় দেওয়ার জন্য একটা নতুন পরিকল্পনা বেছে নিয়েছি। এই অভ্যাসগুলি আমাদের ব্যক্তিত্বকে আরো বেশী সুদৃঢ় করেছে এবং এই মহাদুর্যোগের সময়ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সাহায্য করেছে।
স্ব-যত্ন
আমি, আপনি কম বেশী সবাই নিজের শরীরের প্রতি যত্নবান ছিলাম আগে থেকেই। কিন্তু মহামারী চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরণের নতুন স্ব-যত্নের কৌশল ও আমরা জেনেছি। জেনেছি, আমাদের নিজেদের স্বাস্থ্য আমাদের পরিবারেরও সুস্বাস্থ্য ।
পরিচ্ছন্নতা
মুখে মাস্ক পরার কারণে এমনিতেই বাইরের ধুলোবালি, রোদ থেকে রক্ষা মিলছে তাই ত্বক এমনিতেই সুরক্ষিত থাকছে। নিয়মিত হাত ধোয়ার কারণে দূরে থাকা সম্ভব হচ্ছে করোনা ভাইরাস ছাড়াও অন্য অসুখ থেকে। বাড়িঘর, পোশাক, আসবাবও আগের থেকে অনেক বেশি পরিষ্কার রেখেছি।
দায়িত্ব
মহামারী চলাকালীন, আমরা কেবল আমাদের নিজের স্বাস্থ্যের জন্যই নয় বরং আমাদের বন্ধু, পরিবার, সমাজ এবং দেশ তথা অন্যদেশের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য চেষ্টা করেছি। আমরা মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেছি এবং কেউ না মানলে অন্যকে ঝুঁকিতে ফেলার দোষে জবাবদিহিতার ব্যবহার করেছি।
নিজেকে কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা
আমরা নিজেও সময় পেয়েছি এবং কাজের লোকের অপ্রাপ্তিতে নিজেদের কাজ নিজেরাই করে নিজের অজান্তে নিজেদেরকে কর্মী হিসেবে গড়ে তুলেছি। এই অভ্যাসগুলোকে নিয়মিত দিনের তালিকায় রাখুন।
অনুশীলনের চর্চা
অনেকে হোমঅফিসের ফাঁদে পড়ে বা বাইরে ঘুরতে যেতে না পারায় বাসায় সময় কাটিয়েছি এই পরিস্থিতিতে নিজেদের প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ব্যায়াম অনুশীলন করার চেষ্টা করেছি। এই অভ্যাসগুলো অবশ্যই আমাদের শরীরের জন্য সুফল বয়ে নিয়ে আসবে তাই এই অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ না করে স্বাভাবিক জীবনে এগুলাকেই আদর্শ মেনে জীবন যাপনে পরিবর্তন ধরে রাখুন।
সামাজিক সম্পর্ক
মহামারীটির কবলে পড়া অসহায়দের সাহায্যের জন্য অনেকেই ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি সংঘবদ্ধ হয়ে। একাকীত্ব এবং বিচ্ছিন্নতাকে কাটিয়ে উঠার জন্য নতুন নতুন সম্পর্ক তৈরি করেছি। সহায়তা এবং নির্দেশনার জন্য এই মানুষদের সাথে নিয়মিতভাবে সাক্ষাৎ করতে থাকুন। এই সর্ম্পকগুলোকে বাঁচিয়ে রাখুন।
অনিশ্চয়তার জন্য পরিকল্পনা
একটি বৈশ্বিক মহামারীর ভয় আমাদের অনেককেই আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি যেমন আর্থিক এবং শারীরিক নিরাপত্তার দিকে ভালভাবে নজর দিতে বাধ্য করেছে। ভবিষ্যতে জরুরী অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয়ী পরিকল্পনা করে রাখুন। যদিও বন্ধু, আড্ডা, সিনেমা, বেড়ানো- কিছুই আগের মতো নেই সেইদিক থেকে অজান্তেই বাঁচছে খরচ।
হ্যাঁ, আমরা সবাই ক্লান্ত, চারিদিকে প্রিয়জনদের অপ্রত্যাশিত মৃত্যু আমাদের স্বাভাবিক জীবনকে বিষিয়ে তুলছে কিন্তু মহামারী চলাকালীন আমরা যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলি গ্রহণ করেছি তা পুনর্ব্যবহার এবং নতুন প্রজম্নের কাছে পুনরায় প্রেরণ করা আমাদের নিজেদের এবং অন্যদের সুরক্ষিত রাখতে এবং এমনকি মহামারী শেষ হওয়ার পরে আরও পরিপূর্ণ জীবনের জন্য একটি আদর্শ পরিকল্পনা হতে পারে।
কিছু কিছু অভ্যাস আপনার বিরক্তির কারণ হলেও এই করোনার কারণেই অনেক ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে উঠেছে। আর সেসবের সুফল আপনি হয়তো ইতিমধ্যেই ভোগ করতে শুরু করেছেন আর না হয় করবেন। সুস্থ থাকুন।