ধূমকেতু ডেস্ক: মহামারী করোনাভাইরাস ঠেকাতে রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির নিরলস প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনার সম্ভাব্য একটি ভ্যাকসিনের জন্য শতাধিক গ্রুপ দিনরাত কাজ করছে।
একটি কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরি করতে বছরের পর বছর সময়ের প্রয়োজন হয়। কারণ ভ্যাকসিন তৈরির পর তা মানবদেহে প্রয়োগ করে কার্যকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও নিরাপদ কিনা তা যাচাই করা হয়। এসব করতেই দীর্ঘদিন সময় লেগে যায়। আবার করোনাভাইরাস প্রতিনিয়ত রূপ বদলে ফেলায় তৈরিকৃত ভ্যাকসিন কাজ করবে কিনা সেটিও চিন্তায় ফেলছে বিজ্ঞানীদের।
তবে এগিয়ে থাকা চারটি ভ্যাকসিনের বর্তমান অবস্থান কী, আসুন জেনে নিই :
১. অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন
ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তিন মাসের প্রচেষ্টায় চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯ নামে একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। নভেল করোনাভাইরাসের দুর্বল প্রজাতির একটি অংশ ও জিন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এই ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিনটি মানবদেহে প্রয়োগ করা হলে সেটি করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন শনাক্ত করবে।
অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকিসনটি বর্তমানে ফেইজ-১ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে। কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা যাচাই করার জন্য সুস্থ স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে এটি প্রয়োগ করা হয়েছে। জুনের মাঝামাঝি সময়ের দিকে ক্লিনিক্যাল এই ট্রায়ালের ফল আসতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
২. যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসভিত্তিক মডার্না ভ্যাকসিন
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এলার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেশটির ম্যাসাচুসেটসের বায়োটেক কোম্পানি মডার্না করোনার আরএনএ ব্যবহার করে একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে।
ইতোমধ্যে এমআরএনএ-১২৭৩ নামের এই ভ্যাকসিনের ফেইজ-১ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হয়েছে এবং ফেইজ-২ ট্রায়ালের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। মানুষের শরীরের কোষে এই ভাইরাসটি প্রয়োগের পর মলিকিউলার নির্দেশনা অনুযায়ী ভাইরাল প্রোটিন তৈরি করে। শরীর এই ভাইরাল প্রোটিন শনাক্ত করার পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৩. বেইজিংয়ের সিনোভ্যাক বায়োটেক
নভেল করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য একটি ভ্যাকসিন বানরের দেহে প্রয়োগে সফলতার দাবি করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। চীনা বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সিনোভ্যাক বায়োটেক নামের একটি কোম্পানি পিকোভ্যাক নামের এই করোনা ভ্যাকসিন তৈরি করেছে।
ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের পর করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে নেয়া হয় বানরকে। এতে দেখা যায়, সম্ভাব্য এই ভ্যাকসিন বানরের দেহে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ করেছে। বর্তমানে এই ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে।
৪. ফাইজার ও বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি ফাইজার এবং জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক করোনার সম্ভাব্য চারটি আরএনএ ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে। ইতোমধ্যে তাদের তৈরি বিএনটি১৬২ নামের একটি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
মডার্না কোম্পানির ভ্যাকসিনের মতোই এই ভ্যাকসিনটি আরএনএ ভিত্তিক। যুক্তরাষ্ট্রে এই ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হয়েছে। শিগগিরই দ্বিতীয় দফায় আরও ৩৬০ জন স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবীর দেহে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে।