স্বাস্থ্য

করোনা চিকিৎসায় তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার ইসরায়েলের তৈরি এন্টিবডি

ধূমকেতু প্রতিবেদক: ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাফতালি বেনেট দাবি করেছেন, মানব দেহে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসকে খুঁজে বের করে পাল্টা আক্রমণ করে একে নিস্ক্রিয় করতে পারে এমন এন্টিবডি তৈরি করেছেন তার দেশের জীব বিজ্ঞানীরা। সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এক ক্লোন-বিশিষ্ট এই এন্টিবডি তৈরি করেছেন ইসরায়েল ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল রিসার্চের বিজ্ঞানীরা। করোনাভাইরাসের বাহকের শরীরে এই এন্টিবডি প্রবেশ করালে, তা খুঁজে বের করে প্রতিহত করবে ভাইরাসকে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাফতালি বেনেটের দাবি, করোনা চিকিৎসায় এ যাবৎ সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার এই এন্টিবডি। তিনি বলেন, গবেষকরা সেই প্রোটিনের সন্ধান পেয়েছেন যা রোগীর শরীরেই জীবাণুটিকে মেরে ফেলতে পারে। এ ব্যাপারে শিগগিরই একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হবে।

তবে মানুষের শরীরে এর পরীক্ষা করা হয়েছে কিনা বিষয়টি পরিস্কার নয়। ভারতীয় গণমাধ্যম দ্যা প্রিন্ট এ খবর দিয়েছে।

ইতিমধ্যেই ওই এন্টিবডি তৈরি করে ফেলেছেন তারা। এখন চলছে পেটেন্ট সংক্রান্ত কাজকর্ম এবং সেইসঙ্গে চিকিৎসার জন্য ব্যাপক আকারে উৎপাদনের প্রক্রিয়া। এই এক কোষ বিশিষ্ট প্রোটিনটি প্রাথমিকভাবে তৈরি হয়েছে করোনা থেকে সেরে ওঠা রোগীর একটি কোষ থেকে। ফলে এর শক্তি বহু কোষবিশিষ্ট এন্টিবডির থেকে অনেক গুণ বেশি।

বেনেট রোববার ইসরায়েলের নেস জিওনা এলাকায় ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল রিসার্চ -আইআইবিআর-এর ল্যাবে গিয়েছিলেন। এই সংস্থার দেখাশোনা করে খোদ প্রধানমন্ত্রীর অফিস। করোনার টিকা তৈরির দায়িত্ব এদের ওপর দেওয়া হয়। সেখানে তাকে দেখানো হয় উদ্ভাবিত সেই এন্টিবডি যা ভাইরাসটিকে আক্রমণ করে সংক্রমিতের শরীরের ভেতরেই তাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে।

পেটেন্ট নেওয়ার পর্ব শেষ হলে গবেষকরা এই এন্টিবডি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির দ্বারস্থ হবেন। মার্চেই এক ইসরায়েলি সংবাদপত্র চিকিৎসকদের উদ্ধৃত করে বলে, ওই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা করোনা জীবাণুর বায়োলজিক্যাল মেকানিজম বোঝার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর ফলে এন্টিবডি তৈরির কাজ সহজ হবে, তারপর তৈরি হবে টিকা। সেই গবেষণার তৈরি এন্টিবডিই বেনেটকে দেখানো হয়েছে কিনা তা পরিষ্কার নয়। মানুষের ওপর এর পরীক্ষা হয়েছে কিনা এখনও জানানো হয়নি, তবে চিকিৎসা সংক্রান্ত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে খবর।

গবেষকরা সেই প্রোটিনের সন্ধান পেয়েছেন যা রোগীর শরীরেই জীবাণুটিকে মেরে ফেলতে পারে। এ ব্যাপারে শিগগিরই একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হবে।

এই এন্টিবডি কেন আশা জাগানিয়া

ইসরায়েলে উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস এন্টিবডিকে কেন আশাজাগানিয়া ও অনন্য সাফল্য বলা যাবে, সে বিষয়ে মার্কিন বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বসের প্রতিবেদক সেথ কোয়েন তথ্যনির্ভর কিছু যুক্তি উপস্থাপন করেছেন।

তিনি মনে করেন তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্যের কারণে করোনা চিকিৎসায় এটি টেকসই হবে।

প্রথমত: এটি এককোষী [monoclonal] এন্টিবডি; যার অর্থ হলো, এতে এমন কোনো ক্ষতিকর প্রোটিন থাকবে না, যা প্রয়োগে কোনো প্রকার ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে; বরং এককোষী হবার ফলে প্রয়োগ সহজতর হবে।

দ্বিতীয়ত: এটি মানবদেহে থাকা করোনাভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম।

তৃতীয়ত: একই ভূখণ্ডে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকা দেহকোষ থেকে এটি তৈরি হবে বিধায়, বিশ্বব্যাপী জিনগত পরিবর্তন সত্বেও এটি ভূখণ্ডভেদে পরিবর্তিত করোনাভাইরাসের ওপর কার্যকর থাকবে।

বিশ্বব্যাপী ১০০টিরও বেশি গবেষণা দল একই সময়ে করোনাভাইরাসের এন্টিবডি বা ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে তৎপর থাকা সত্ত্বেও উল্লেখিত তিনটি নিয়ামকে এন্টিবডি উদ্ভাবনের কোনো দাবি বা খবর এখন পর্ন্ত পাওয়া যায়নি। ফলে, নতুনত্ব বা অভিনবত্ব এবং উদ্ভাবনী স্তর বিবেচনায় ইসরায়েল ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল রিসার্চ -আইআইবিআর এর উদ্ভাবনটি অনন্য।

যদিও আইন ও বিধিগত অনুমোদন এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা প্রতিপালন শেষেই কেবল উদ্ভাবিত এই এন্টিবডির বিশ্বব্যাপী প্রয়োগ সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *