খোকন কুমার রায়:
জাতির এই ভয়াবহ অবস্থায়ও নোংরা রাজনীতি! আর কোন পরিস্থিতিতে এইসব নোংরামি থেকে আমরা রেহাই পাবো? একটি খবরে দেখলাম, জনপ্রতি ৩০০ টাকা করে দিয়ে হতদরিদ্র লোক ভাড়া করে ত্রাণের দাবিতে মিছিল করাচ্ছে। ঠিক যেমন মিছিল, মিটিং, জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে টাকার বিনিময়ে লোক ভাড়া করা হতো। একটা শ্রেণী সব সময়ই ওঁৎ পেতে থাকে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য।
আর একটা খবরে দেখলাম, গ্রামে দরিদ্র কৃষকের রক্তাক্ত ছবি দিয়ে ক্যাপশন করেছে যে, স্থানীয় চেয়ারম্যানের নিকট ত্রাণ চাওয়ায় তাকে মেরে রক্তাক্ত করেছে। কিন্তু বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখলাম রক্তাক্ত করা ছবিটি ভুয়া।
আরেক দল ত্রাণ চুরিতে ব্যস্ত এবং আমার ধারণা এরা সেই সুযোগসন্ধানী এবং অনুপ্রবেশকারী গোষ্ঠী, যারা গরীবের ত্রাণ চুরি করে এই সংক্রমণের মধ্যে দরিদ্র মানুষগুলোকে বাইরে বের হতে বাধ্য করছে।
আরো দেখতে পাচ্ছি করোনা আতঙ্কে সবাই যখন গৃহবন্দী তখন একটি অপশক্তি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় মন্দিরে ভাঙচুর, হামলা এবং জায়গা-জমি জবরদখলের তৎপরতায় লিপ্ত।
বিগত ০৫/০৪/২০ইং তারিখে লিখেছিলাম, “যা হবার হয়ে গেছে, আরও কিছু বাকি আছে”- শিরোনামে। এই ভয়ঙ্কর সংক্রমণ পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস কর্মীদের কর্মস্থলে নিয়ে আসা এবং ফেরত যাওয়া প্রসঙ্গে। বর্তমানে আমরা আর কী কী বাকি আছে সেটাই দেখে যাচ্ছি।
ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের শ্রমিকদের মাধ্যমে হয়তো দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে সংক্রমণের মাত্রাও অনেক বেশি। এখন আবার গার্মেন্টস শ্রমিকরা দলে দলে রাস্তায় নেমেছে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে। না জানি আরো কতো সংক্রমণ হতে পারে! এদের বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে রাস্তায় নামানোও চক্রান্তের অস্ত্র হতে পারে, যেমনটি বিভিন্ন ভুয়া নিউজ ছড়ানো, টাকায় লোক ভাড়া করে ত্রাণের দাবিতে মিছিল করানো, ত্রাণ চুরি করা, ইত্যাদি ক্ষেত্রে দেখা গেছে।
এই সব ষড়যন্ত্রকারীরা এই বাংলার দরিদ্র, সহজ-সরল ও ধর্মপ্রাণ মানুষগুলোকে নিয়ে বারবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে কিন্তু কখনোই সফল হয়নি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি বিভিন্ন বাহিনী যখন ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণ বিতরণসহ সকলের সেবায় নিয়েজিত রয়েছেন, এই সময়ে চক্রান্তকারীরা দেশকে আরো বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়ার তৎপরতায় লিপ্ত।
বৈশ্বিক এই চরম দুর্যোগময় পরিস্থিতিতেও যারা ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ও নোংরা রাজনীতিতে মেতে উঠেছেন, তাদের উদ্দেশে বলছি, এই ভয়াবহ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এসব নোংরামি হতে যদি বিরত না থাকেন তাহলে সমগ্র বিশ্বের সাথে আপনারাও পস্তাবেন। কারণ করোনা কোনো দল বা রাজনীতি বোঝে না, বোঝে শুধু মানুষের শরীর।
কাজেই দলমত নির্বিশেষে কেউ ঝুঁকিমুক্ত নয়। নোংরা রাজনীতির খেলায় দরিদ্র ও অসহায় মানুষগুলোকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিবেন না। যদিও অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, এদের জীবন আপনাদের নিকট মূল্যহীন। আপনাদের নিকট মূল্যবান শুধু ক্ষমতা, টাকা, দুর্নীতি আর দেশ-বিদেশে ভোগ বিলাসিতা।
হায়রে! কতো রঙ্গ দেখছি এই দুঃখী বঙ্গ দেশে।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, ধূমকেতু.কম।