আলম শাইন :
পাখির বাংলা নাম নীলডানা হরবোলা। ইংরেজি নাম ‘ব্লু-উইংড্ লিফবার্ড’ (Blue-winged Leaf-bird)। বৈজ্ঞানিক নাম : Chloropsis cochinchinensis। অনেকের কাছে এরা ‘পাতা বুলবুলি’ নামে পরিচিত। অথচ প্রজাতিটি বুলবুলি গোত্রের কেউ নয়।
এরা দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব কটি অঞ্চলে কমবেশি দেখা মেলে। দেখতে ভারি চমৎকার। বিচরণ চিরসবুজ ও পাতাঝরা বনে। বিচরণ করে জোড়ায় কিংবা ছোট দলেও। এদের বড় গুণ এরা খুব সহজেই অন্য পাখির কণ্ঠস্বর হুবহু নকল করতে পারে। ফলে এদের নামের শেষাংশে যোগ হয়েছে ‘হরবোলা’। নিজেরাও গান গায় মিষ্টি সুরে। সারা দিন বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ালেও পাখি পর্যবেক্ষকরা এদের সাক্ষাৎ পান না সহজে, তবে কণ্ঠস্বর শুনতে পান। ওদের দৈহিক বর্ণ এমন যে খুব সহজে পাতার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। বিচরণ ক্ষেত্র যত্রতত্র নয়। গ্রামাঞ্চলে খুব কমই দেখা মেলে। অত্যন্ত অস্থিরমতি পাখি এরা। কোথাও একদণ্ড চুপচাপ বসে থাকতে নারাজ। গাছের ডালে ডালে লাফিয়ে বেড়ানো ছাড়া কোনো কাজ নেই মনে হচ্ছে। বৃক্ষচারী পাখি, পারতপক্ষে জমিনে পা রাখে না। খাবার সংগ্রহ করে গাছে গাছে উড়ে উড়ে।
প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৫-১৭ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় খুব বেশি তফাত নেই। পুরুষ পাখির দেহের সমস্ত পালক উজ্জ্বল সবুজ। চিবুক কালো। চিবুকের নিচের পালক উজ্জ্বল নীলচে বেগুনি। গলায় হলুদাভ মালাসদৃশ রেখা। ডানার বাঁকের ওপর উজ্জ্বল সবুজাভ নীল। অন্যদিকে স্ত্রী পাখির চিবুকে কালো দাগ নেই। বাদবাকি একই রকম। উভয়ের ঠোঁট ও চোখ কালো। অপ্রাপ্তবয়স্কদের চেহারা স্ত্রী পাখিদের মতো।
প্রধান খাবার : ছোট ফল, ফুলের মধু ও পোকামাকড়। বিশেষ করে শুঁয়াপোকার প্রতি আসক্তি বেশি। শিমুল ফুলের মধু এদের খুব প্রিয়।
প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুলাই। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। গাছের উচ্চশিখরে বাটি আকৃতির বাসা বাঁধে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চিকন কাঠি, পাতা, নরম ঘাস ও তন্তু। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে লাগে ১৮-২০ দিন।