নিখিল মানখিন, ধূমকেতু বাংলা: ওষুধ প্রতিরোধী কমাতে (মেডিসিন রেজিস্ট্যান্ট) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ওষুধ প্রতিরোধী জটিল আকার ধারণ করেছে। অনেক সংক্রামক রোগ খুব সহজে ভালো হচ্ছে না। একের পর এক ওষুধ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ব্যয়বহুল করে তোলার পাশাপাশি অকালে মৃত্যু ডেকে আনছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ প্রতিরোধী এখন মানুষ ও পশু স্বাস্থ্য এবং কৃষি সেক্টরের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশু খাদ্যের জন্য ব্যবহৃত প্রায় ৫০ প্রকারের এন্টিবায়োটিক আজ প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। প্রতিরোধী জীবাণু পরবর্তীতে পশু থেকে মানুষে স্থানান্তরিত হতে পারে। ওষুধের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার রোধে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নেই। অভিযানের ঘোষণা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
অনেক চিকিৎসক ব্যবসায়িক স্বার্থে রোগীদের জন্য অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর রোগীরাও আস্থার সঙ্গে ব্যবহার করে যাচ্ছেন চিকিৎসকদের তালিকাভুক্ত ওষুধ।
ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞ চিকিৎসকরাও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডীন অধ্যাপক ডা: এবিএম আব্দুল্লাহ ধূমকেতু বাংলাকে জানান, এন্টিবায়োটিক ওষুধ বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত সমাদৃত এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে যার অবদান অবিস্মরণীয়। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, অপব্যবহারের কারণে এ এন্টিবায়োটিক ওষুধের ক্ষমতা কোনো কোনো জীবাণু ধ্বংসের ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশেও এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার কম নয়। মানুষ কোনো রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেই প্রাথমিকভাবে তার নিকটবর্তী দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেতে পারে। ওষুধ কিনতে কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় এবং ডাক্তারের কোনো প্রেসক্রিপশন না লাগায় মানুষ সহজেই এ কাজটি করছে। এটি হচ্ছে জনসচেতনতার অভাবে। ফলে অপরিমিত ও মাত্রাহীন ওষুধ খাওয়ার ফলে এর জীবাণুনাশক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এন্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা রোধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া দরকার জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা: শারফুদ্দীন আহমেদ ধূমকেতু বাংলাকে বলেন, এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহারে নিশ্চিত করতে হলে চিকিৎসক ও রোগী উভয়কেই বিবেকবান হতে হবে। ফার্মেসীগুলো নিয়ন্ত্রণে না আসলে এবং জেনারেল প্র্যাক্টিশনার্স চিকিৎসকরা যতক্ষণ বিবেকবান না হবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে না। মেডিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত না হয়ে অপ্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক নয় বলে মনে করেন অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দীন আহমেদ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার সারাবিশ্বকে আজ ভাবিয়ে তুলেছে। এমন অবস্থা মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে ছয়টি করণীয় তুলে ধরেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেগুলো হলো- প্রতিটি দেশকে সম্মিলিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা উচিত। পর্যবেক্ষণ ও ল্যাবরেটরি ক্যাপাসিটি বাড়ানো দরকার। প্রয়োজনীয় ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধসহ ওষুধের গুণাগুণ নিশ্চিত করতে হবে। ওষুধের ব্যবহার ভালভাবে মনিটরিং করতে হবে। সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে হবে। শক্তিশালী গবেষণার পাশাপাশির চিকিৎসার নতুন নতুন ওষুধ ও উপকরণের বিস্তার ঘটাতে হবে।
ওষুধ প্রতিরোধী হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, যে সব এন্টিবায়োটিক কুষ্ঠ, যক্ষ্মা, গনোরিয়া ও সিফিলিস রোগ প্রতিরোধে ঐতিহাসিক ভুমিকা রেখেছে, সেগুলোর অনেক এন্টিবায়োটিক আজ জীবনের ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওষুধ প্রতিরোধী মোকাবেলায় দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে অনেক সাধারণ সংক্রামক রোগ ভালো হবে না। এতে অসহায় অবস্থায় রোগীকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হবে। ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠার বিষয়টি খুব পরিষ্কার। এ বিষয়ে আজ উদ্যোগ না নিলে আগামীকাল একটি রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে না। লাখ লাখ মানুষকে সুস্থ করে তুলতে পারে এমন অতি প্রয়োজনীয় অনেক ওষুধ নষ্ট করে ফেলতে পারি না।
ওই সব ওষুধ যাতে প্রতিরোধী না হয়ে ওঠে সেদিকে সর্তকতা অবলম্বন করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। পৃথিবীতে অর্ধেকের চেয়ে বেশি ওষুধের ক্ষেত্রে ভুল প্রেসক্রিপশন হচ্ছে অথবা ওষুধ ভুলভাবে বিতরণ বা বিক্রি করা হচ্ছে। প্রায় অর্ধেক রোগী ভুলভাবে ওষুধ গ্রহণ করছে। এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার না হলে সংক্রামক রোগের বিস্তার ঘটায়। এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে সাবধানী না হলে খুব শীঘ্রই মানবজাতি জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রাণরক্ষার যুদ্ধে পরাস্ত হবে।
আরো পড়ুন: