চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। প্রতি বছর চলচ্চিত্র শিল্পে অবদান রাখায় এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ বছর ২৭টি ক্যাটাগরিতে মোট ৩৪টি পুরস্কার দেওয়া হবে। সম্প্রতি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি চূড়ান্ত তালিকার অনুমোদন দিয়েছেন।
একটি সূত্রে জানা গেছে, চলচ্চিত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন ও অভিনেত্রী ডলি জহুর।
ডলি জহুরের আজীবন সম্মাননা পেতে যাওয়ার খবরে ক্ষোভ ঝেড়েছেন কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী অঞ্জনা। এ বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া স্ট্যাটাসে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও জুরিবোর্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এবার তার পথেই হাঁটলেন একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নূতন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে টিকটক ক্যাটাগরি নেই? টিকটক আর ফেসবুক ফলোয়ার ক্যাটাগরি রাখার আবেদন করছি। সঙ্গে ভাইরাল ক্যাটাগরি রাখলে মন্দ হয় না।
নূতন আরও লেখেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে এমন লেখা লিখতে হবে, তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। এ দেশে নায়িকা হওয়া এখন আমার জন্য পাপ মনে হয়। মাঝে মাঝে আমার বাবার প্রতি খুব রাগ হয়। আমি সাউথের মেয়ে ছিলাম, বাবার জন্ম সেখানে। ফুফু সাউথ নায়িকা ছিলেন। সেখানে থাকলে আমিও নায়িকা হতাম, যদি ভাগ্যে থাকত। তাই-ই ভালো ছিল। বড় তারকা না হলেও অসম্মানিত বা লজ্জিত তারকা হতাম না এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত। চেহারা আর নাচ দিয়ে কিছু না কিছু করতে পারতাম।
নায়িকার ভাষ্য, আজীবন সম্মাননা বলতে যে এই দেশে কিছু আছে, আমি তা ভুলেই গিয়েছিলাম। ‘ওরা ১১ জন’ যে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র, আর আমি সে চলচ্চিত্রের ক্ষুদ্র একজন অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও যে আজীবন সম্মাননা পেতে অনেক কিছু করা লাগে, তা আমার জানা নাই। আরও যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়, তাও আমার অজানা। কি কি যোগ্যতা লাগে, তা আমি জানি না। তাই ৫০ বছরের মতো চলচ্চিত্র জীবনে তা জানতে চাই।
তিনি যোগ করেন, যদিও আজীবন সম্মাননা আমার কাছে খুব বিশাল কিছু না। এর চেয়ে বড় পুরস্কার আমি বহু পেয়েছি, মানুষের কাছে। আমি বিশ্বাস করি, মৃত্যু পরবর্তী আমি কিছু মানুষের কাছে আজীবন সম্মাননা পেয়ে যাব। সে কাজ আমি করেছি। আমি নিজেকে আজীবন সম্মাননার মতো যোগ্য মনে করছি না। তবে অঞ্জনার মতো করে এক সুরে বলি, সুচরিতা- সে কি যোগ্য না? সুচরিতার যোগ্যতা মাপার মাপকাঠি নির্বাচকদের হয়নি। হবেও না।
নূতনের হুঁশিয়ারি, দয়া করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারকে তেলের দ্বারা তৈলাক্ত করবেন না। তাহলে হাত পিছলে পরে যাবে, যা আর ঘরঅবদি নেওয়া যাবে না।
স্মৃতিচারণ করে তিনি লিখেছেন, একসময় এই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর কাজ করতাম। তারপর অনেক ত্যাগ, পরিশ্রম, ভালোবাসা, চেনা-জানা এবং দক্ষতা দিয়ে তা পেতে হতো। পাওয়ার পরে কত আলোচনা, কত আয়োজন।
বর্তমান সময়ের প্রসঙ্গ টেনে অভিনেত্রী লেখেন, এখন তা (জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার) যাকে তাকে অন্য পুরস্কারের মতো দেওয়া হয়। মানে ব্যাপারটা এমন যে, পুরস্কার দিয়ে ভালোবাসা নেওয়া। অনেকটা ফেসবুক অ্যাওয়ার্ডের মতো। যার ফলোয়ার হাইপ বেশি, সে পুরস্কার নিয়ে ছবি তুলবে। তাতে স্পনসর আসবে বা পুরস্কারের জাত বাড়বে। কিন্তু এটা তো সরকারি পুরস্কার, তাহলে জাত বাড়ানোর কি আছে! না জাত বাড়ানোর কিছু নেই, তবে টেনে নামানোর অনেক কিছু আছে।
নূতনের মতে, একটা সিনেমা করেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে পারে, তা নিয়ে আমি দ্বিমত করছি না। যারা পেয়েছেন, তারা অবশ্যই যোগ্য। তবে যারা দিচ্ছেন তারা? এমন যেন না হয়, যাকে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে সেই লজ্জিত হচ্ছে, যে কেন পেলাম? তা হলে দুঃজনক। এই দেশে সম্মাননাকেও সম্মানহানি হতে হয়।
তার ভাষ্য, আমাদের ৮০-৯০ দশকের চলচ্চিত্র অভিনেতা অভিনেত্রীদের জন্য বাংলা চলচ্চিত্র এখন অনেকাংশে অভিশাপ। শুধু নির্বাচন আর মাঝে মাঝে চামড়ার মুখে মাথার মুকুট বলে চালানো ও সম্মানিত বলে অসম্মানিত করা ছাড়া কিছুই না। যা নায়ক রাজ রাজ্জাকও দেখে গেছে।
শঙ্কা প্রকাশ করে এই অভিনেত্রী লিখেছেন, কাঞ্চন-ডলি জহুরসহ যারাই এবার পুরস্কৃত হচ্ছেন, সবাইকে শুভকামনা-ভালোবাসা। কাঞ্চন আর ডলি শতভাগ যোগ্য। আমি ভয়ে আছি অন্য কারণে। হুট করে আবার টিকটক বা ফেসবুকের মহরত নায়ক-নায়িকা বা পাঁচটা ছবি করে তিনটা পুরস্কার পাওয়া নায়ক-নায়িকা এসে যদি বলে, আপনি আর আমি সমান। আমিও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি, আপনিও পেয়েছেন। সে কথার উত্তর আমি কি দিয়ে দেব? এমনিতেই ভয়ে আছি, অনেকে বলে আপু আপনি এত বড় নায়িকা, আপনার ফেসবুক ফলোয়ার নেই কেন? আমার ৫-৬ লাখ ফলোয়ার। শেষ একটা কথাই মনে পড়ল, বিচারক তোমার বিচার করবে কে?