প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার সময় কিছু অসাধু চক্র টাকা হাতিয়ে নিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার চেষ্টা করে এবং তাতে ব্যর্থ হলে প্রশ্নফাঁস করার নামে প্রতারণার জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়ে ফেসবুক, মেসেঞ্জার এবং অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমে প্রচারণা চালায়। এমনই দুটি প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ।
রবিবার (১৪ নভেম্বর) বিকালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবি প্রধান হাফিজ আক্তার এই তথ্য জানান।
ঢাকার উত্তরা, গাজীপুরের পূবাইল থানা এলাকা এবং নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। চক্রটি পরীক্ষার প্রশ্ন দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো, কালিমুল্লাহ, আল-রাফি ওরফে টুটুল ও আব্দুল্লাহ আল মারুফ ওরফে তপু।
তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৩টি স্মার্টফোন, ২টি বাটন ফোন, নগদ ১২ হাজার টাকা এবং ৬টি মোবাইল সিম। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিবি পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান।
তিনি বলেন, যেকোনও পাবলিক পরীক্ষার আগে আমাদের সাইবার পেট্রোলিং বৃদ্ধি করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এই দুটি প্রতারক চক্রকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি সূত্র জানিয়েছে, এই চক্রটি মূলত বিভিন্নভাবে বেনামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে মেসেঞ্জারে এবং ফেসবুকে শতভাগ নিশ্চয়তা সহকারে বিভিন্ন বোর্ডের সব বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস করার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রার্থী সংগ্রহ করে।
প্রশ্নফাঁসের এই চক্রের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার জন্য পরীক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের প্রাথমিকভাবে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হতে হয়। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য তাদের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতো চক্রটি।
এই চক্র পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জানাতো, ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলা এবং জেলা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন বহনকালে দায়িত্বশীলদের একজন কৌশলে একাধিক প্রশ্ন সরিয়ে রেখে ছবি তুলে পাঠিয়ে দেবে। সেই ছবি তারা বিভিন্ন জনকে মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাফ ও জিমেইলে সেন্ড করে দেবে। এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা নগদ, বিকাশ, রকেটের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কালিমুল্লাহ টঙ্গী সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, আল রাফি টুটুল মোহনগঞ্জ সরকারি কলেজের মানবিকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং আব্দুল্লাহ আল মারুফ ঢাকার হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা বলে তারা যেসব মেসেঞ্জার, ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে প্রতারণা করতো সেগুলো হলো, কোশ্চেন ব্যাংক, এসএসসি কোশ্চেন ২০২১, এইচএসসি কোশ্চেন ২০২১, কোশ্চেন লিক, PSC, JSC, SSC, HSC – All Exam Helping Zone এবং SSC 2021 All Board ইত্যাদি। সব পেজ ও ম্যাসেঞ্জারে থাকা সদস্য ও চক্রগুলোর তথ্য সংগ্রহ করেছে ডিবি।
এ প্রতারক চক্রের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপের ফলোয়ারের সংখ্যা ৪ হাজার ৭০০ জন।
পাবজি খেলায় পটু আল রাফি ও টুটুল সাইবার সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ে যথেষ্ট ধারণা রাখে। আল-রাফি ওরফে টুটুল ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য “আলমগীর হোসেন” নামে একটি ফেক আইডি খোলে। আইডিটি খোলার জন্য সে একটি টেম্পোরারি মেইল আইডি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করে। এই ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও টেম্পোরারি মেইলটি দুই থেকে তিন দিন সক্রিয় থাকার পরে অটোমেটিক্যালি ডিঅ্যাক্টিভেট হয়ে যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতরা আসলে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। তাদের পক্ষে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা অসম্ভব। কিছু ছাত্র এবং অভিভাবক ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ক্রয়ের জন্য ব্রাউজ করতে থাকে। গ্রেফতারকৃত প্রতারকরা মূলত এদেরই টার্গেট করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার নানা রকম আকর্ষণীয় প্যাকেজের কথা বলতো।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ম্যানুয়ালি এবং সাইবার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, “যেসব ছাত্র এবং অভিভাবক এই চক্রের কাছ থেকে ফাঁস করা প্রশ্নপত্র সংগ্রহের চেষ্টা করে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।”