ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে জন্ম নেওয়া স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ মাত্র ৫০ বছরেই গোটা বিশ্বকে দেখাচ্ছে আর্থিক বিকাশের পথ। অন্যদিকে, ভুল নীতির কারণে চরম অর্থ সংকটে সরকারি কর্মীদের বেতন দিতেই হিমশিম খাচ্ছে পাকিস্তান। আর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো ক্ষিপ্রতার সঙ্গে বাংলাদেশ আজ এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ আর্থিক বুনিয়াদের ওপর দাঁড়াতে চলেছে। পশ্চিমা দুনিয়াও বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সাফল্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
বিখ্যাত ইন্টারন্যাশনাল অনলাইন পোর্টাল ‘সাবস্টাক’-এ বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও সমালোচক নোহ স্মিথ ‘নোহপিনিয়িন’ কলামে করেছেন বাংলাদেশের অর্থনীতির ভূয়সী প্রশংসা। উঠে এসেছে গোটা দুনিয়াকে কীভাবে বাংলাদেশ নতুন অর্থনৈতিক দিশা দেখাচ্ছে সে কথাও।
নোহ মনে করেন, স্রোতের বিপরীতে গিয়ে রপ্তানিমূলক উৎপাদনের হার বাড়িয়ে বাংলাদেশ গোটা দুনিয়াকে উন্নয়নের নতুন পথ দেখাচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকা বা পূর্ব এশিয়ার বাইরেও যে রপ্তানি বাণিজ্যের হাত ধরে উন্নয়ন সম্ভব, সেটিও প্রমাণ করে চলেছে বাংলাদেশ।
জাপান, তাইওয়ান বা চীন উন্নতি করলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিয়ে চিরকাল হতাশাই ব্যক্ত করে এসেছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ নিয়ে তো জন্মলগ্ন থেকেই নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে এসেছেন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা।
আমেরিকার বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জো স্টিগ্লিটজ এবং ড্যানি রড্রিক তো বলে আসছিলেন, পূর্ব এশিয়া বা ইউরোপের বাইরে রপ্তানিকেন্দ্রিক উৎপাদনের মাধ্যমে উন্নয়ন সম্ভবই নয়। ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার বাইরের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে স্টিগিল্গটজ চিরকাল রপ্তানিকেন্দ্রিক উৎপাদনশীল অর্থনীতির বদলে অন্য কোনো পথ খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন। তার আশঙ্কা ছিল, অচিরেই বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কলকারখানা সব বন্ধ হয়ে যাবে। শ্রমিকরা কাজ হারাবেন। দুনিয়া জুড়ে চলবে শুধু যন্ত্রনির্ভর শিল্প। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো। মোদ্দা কথায়, ইউরোপ বা পূর্ব এশিয়ার বাইরে কলকারখানার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা বহু অর্থনীতিবিদ ভাবতেই পারেননি।
মালয়েশিয়া, তুরস্ক বা ইসরায়েলকে তারা ব্যতিক্রম বলে মনে করেছেন। নোহ মনে করেন, দুনিয়ার অর্থনীতিবিদদের ভুল ভাঙাতে পারে একমাত্র বাংলাদেশের শিল্পায়ন। পূর্ব এশিয়া বা ইউরোপের বাইরেও সফল শিল্পায়ন সম্ভব, সেটা দেশটি সাফল্যের সঙ্গে করে দেখাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ব্যাপক প্রশংসায় ভরে উঠেছে নোহের লেখা।
ব্লুমবার্গের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন উল্লেখ করে তিনি জানান, মাথাপিছু গড় আয়ে পাকিস্তানকে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গেও জিডিপির ফারাক কমছে। ভারতীয়দের ক্রয়ক্ষমতা এখনও বেশি হলেও নোহ মনে করেন, এক্ষেত্রেও দ্রুত এগিয়ে আসছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, উন্নয়নের নিরিখে আরও পিছিয়ে পড়ছে পাকিস্তান। দুর্নীতি আর জঙ্গিবাদীদের তোষণ করতে গিয়ে পাকিস্তান প্রায় দেউলিয়া হতে বসেছে। কর্মচারীদের বেতন দিতেও তাদের অন্য দেশের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। ফরেন রিজার্ভ তলানিতে ঠেকেছে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে বেইজিং থেকে ঋণ নিয়ে নিজেদের সার্বভৌমত্বকেও চীনের কাছে বন্ধক রাখতে বাধ্য হয়েছে ইমরান খানের সরকার। এমনটা বলছেন সে দেশেরই অর্থনীতিবিদদের একটা বড় অংশ। তাদের মতে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মুখে যা-ই বলুন না কেন, দেশকে ভুল পথে চালিত করে অর্থনীতির সর্বনাশা পথে পূর্বসূরিদেরই তিনি সহযাত্রী।
অন্যদিকে, সঠিক পথ বেছে নেওয়ায় বাংলাদেশের আর্থিক উন্নতি আজ গোটা দুনিয়াতেই প্রশংসিত।
এদেশের গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজের সুনাম এখন দুনিয়া জুড়ে। নামিদামি কোম্পানির পোশাকে লেগে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। পোশাক রপ্তানিতে চীন বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনও এগিয়ে। কিন্তু ভিয়েতনামকে হটিয়ে বাংলাদেশ উঠে এসেছে তিন নম্বরে। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে পোশাক এক নম্বর পণ্য।