শিক্ষা ও সাহিত্য

এমপিওভুক্ত হচ্ছে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: আসন্ন অর্থবছরে এমপিওভুক্ত করা হবে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ২শ কোটি স্কুল ও কলেজ এবং ৫০ কোটি টাকা মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট পাশের পর এ নিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়মিত এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) করার ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা আছে। সেটার অংশ হিসাবে এ খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট পাশ হওয়ার পর এ নিয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তির জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব আছে। তবে এমপিওভুক্তির জন্য যখন রাজনৈতিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয় তখন প্রয়োজনের নিরিখে বরাদ্দ বাড়ানো হয়ে থাকে। অতীতেও এমন ঘটেছে।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর ২,৭৩০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে অবশ্য চূড়ান্ত বাছাইয়ে ২,৬১৫টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ছাড়পত্র পায়। পরে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রত্যাশা অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতাবলে ওই বছরের ১২ নভেম্বর ছয়টি এবং ১৪ নভেম্বর একটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। প্রথমে তালিকাভুক্তগুলো থেকে বাদ পড়া ১০১৫টির বেশির ভাগই ছিল অযোগ্য ও তখনকার এমপিও নীতিমালার বিভিন্ন শর্তপূরণ করেনি। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর মামলার আসামিদের নামে প্রতিষ্ঠিত কিছু প্রতিষ্ঠানও বাদ পড়ে। তখন ঘোষণা করা হয়েছিল যে, প্রতিবছরই যোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। কিন্তু এ সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধন করতেই পৌনে দুই বছর লেগে যায়। গত ২৯ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশোধিত এমপিও নীতিমালা প্রকাশ করেছে।

জানা গেছে, প্রস্তাবিত নীতিমালায় এমপিওভুক্তির শর্তে বেশকিছু রদবদল এসেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- শর্ত একটি কমিয়ে তিনটিতে নামিয়ে আনা। এগুলো হচ্ছে- শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থী সংখ্যা এবং পাশের হার। আগে প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির মেয়াদের ওপর ২৫ নম্বর ছিল। সেটি আর নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে ছাত্র সংখ্যায় আবার কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে। ২০২১ সালের নীতিমালা অনুযায়ী, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি পেতে নিম্ন মাধ্যমিকে শহরে ১২০ ও মফস্বলে ৯০, মাধ্যমিকে শহরে ২০০ ও মফস্বলে ১৫০, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহরে ৪২০ ও মফস্বলে ৩২০, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে শহরে ২৫০ ও মফস্বলে ২২০ এবং ডিগ্রি কলেজে স্নাতকে শহরে ৪৯০ ও মফস্বলে ৪২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। পাশের হার স্তরভেদে সর্বনিম্ন ৪৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া নতুন এমপিও পেতে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ এবং পাশের হারে ৪০ নম্বর রাখা হয়েছে।

এমপিও নীতিমালা সংশোধন কমিটির সদস্য ও নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী বলেন, “এই নীতিমালার সব অংশের সঙ্গে একমত নই আমরা। নীতিমালা শিক্ষকদের জন্য। কিন্তু শিক্ষকরা সুফল পাবে না। প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির মেয়াদ বাদ দিয়ে ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তির পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়িয়ে আবার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। নতুন শর্ত অনুযায়ী গ্রাম দূরের কথা, শহরের অনেক প্রতিষ্ঠানও এমপিও পাবে না। বরং নতুন শর্তগুলো সরকারি বেতনভাতা (এমপিও) পাচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলে অনেক এমপিও বাতিল হয়ে যাবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *