নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেলের বাজার। সেখানকার শপে থরে থরে সাজানো বাংলাদেশের খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘প্রাণ’র পণ্য। এর মধ্যে আছে প্রাণ টোস্ট, প্রাণ ড্রাই কেক, জুস বা ফ্রুট ড্রিংকস। আছে বিভিন্ন প্রকারের গুঁড়া মশলা, সরিষার তেল, মিস্টার নুডলস, সস, পটেটো ক্র্যাকার্স, চানাচুর, মুড়ি, ঝালমুড়ি, ক্যান্ডি, বাবল গাম, ললিপপ, সস, জেলি ও সুগন্ধি চাল। এই দূরদেশে স্বদেশি প্রতিষ্ঠানের পণ্য দেখলে যে কারোরই হৃদয়ে গর্বের অনুভূতি বয়ে যায়। হোয়াইটচ্যাপেলের বাজারে এসে তেমনই অনুভূতি হলো।
কথা বলে জানা যায়, লন্ডনের বাঙালি পাড়ায় ‘প্রাণ’ পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছেই। বিশেষ করে সব ধরনের টোস্ট বা বিস্কুট, জুস, সরিষার তেল এখানে ব্যাপক জনপ্রিয়। ‘প্রাণ লিচি ড্রিংক’ লন্ডনের স্কুলগামী শিক্ষার্থীর দারুণ প্রিয় পানীয়। টিফিনে এই লিচি ড্রিংক ছাড়া যেন তাদের চলে না।
শুধু বাংলাদেশি নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের কাছে বিশেষ করে ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপালের মানুষের কাছে আস্থার জায়গা পেয়েছে প্রাণ পণ্য। মধ্যপ্রাচ্যের লোকজনও পরিচিত প্রাণ পণ্যের সঙ্গে।
‘প্রাণ’র অনেক খাদ্যপণ্য ব্রিটিশদের কাছেও প্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে নুডলস ও টোস্টে বেশি আগ্রহ দেখা যায় ব্রিটিশ। বাঙালি পাড়ার সব গ্রোসারি শপে (মুদি দোকান) দেখা যায় প্রাণ পণ্যের আধিপত্য। দিন যতো যাচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশাপাশি ব্রিটিশ নাগরিকদের রঁসুই ঘর-খাবার টেবিলেও বাড়ছে প্রাণ পণ্য।
ফলে বাংলাদেশি মালিকানাধীন গ্রোসারি শপ বা দোকানের পাশাপাশি ব্রিটিশদের জনপ্রিয় শপ আসদা, চেন্সবেরি, উইলসফিল্ডেও ভর্তি থাকে ‘প্রাণ’র খাদ্যপণ্য। এসব পণ্য কিনতে বাংলাদেশি বা এশীয়দের পাশাপাশি ব্রিটিশদেরও ভিড় জমাতে দেখা যায়।
লন্ডনে বাংলাদেশিদের কাছে সবচেয়ে বড় গ্রোসারি শপ বাংলাটাউন। বাংলাটাউনে এক চক্কর দিয়ে দেখা যায়, শপটির থরে থরে সাজানো ‘প্রাণ’র পণ্য। এর মধ্যে চাল, মশলা, সরিষার তেল, টোস্ট প্রভৃতি দেখা যায়।
‘বাংলাটাউন’র স্বত্বাধিকারী ও ব্রিটিশ বাংলাদেশি ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ফুল-সবজি-মাছ) সভাপতি রফিক হায়দার বলেন, যত দিন যাচ্ছে প্রাণ পণ্যের চাহিদা বাড়ছে যুক্তরাজ্যে। ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের কাছে ‘প্রাণ’র সব পণ্য আস্থার প্রতীক।
যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীরা জানান, শুধু লন্ডন নয়; গ্লাসগো, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার, কার্ডিফ, বার্মিংহামের মতো এলাকায়ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে প্রাণ পণ্য। ব্রিটিশ মূলধারার সুপারশপে সুনাম কুড়িয়েছে প্রাণ।
জানা যায়, কনটেইনার ভরে চট্টগ্রাম থেকে সাগরপথে ইংল্যান্ডের ফেলিক্সটো সমুদ্রবন্দরে ‘প্রাণ’র পণ্য আসে। এরপর পুরো যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ‘প্রাণ’র কান্ট্রি হেড (যুক্তরাজ্য) পদে কাজ করেছেন মো. ফরহাদ। তিনি বলেন, ‘প্রাণ’ যুক্তরাজ্যে গত ১৫ বছর পণ্য সরবরাহ করছে। শুধু বাংলাদেশি নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের পণ্য। প্রাণের লিচি ড্রিংক থার্ড জেনারেশনের কাছে অনেক জনপ্রিয়। বাচ্চারা টিফিনে এটা পছন্দ করে। প্রাণের নুডলস এখানকার মূলধারায় ভালো চলে। এ নুডলসের ছয়টি ফ্লেভার সবার পছন্দ।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ-এর তৈরি পণ্য ১৪১টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশে এমন কোনো গ্রাম নেই, যেখানে এই গ্রুপের পণ্য যায় না। দেশ ছাড়িয়ে এখন ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে সুনাম কুড়াচ্ছে বাংলাদেশের ‘প্রাণ’।
আরো পড়ুন:
ভারত ও নেপালে যাচ্ছে সৈয়দপুরে তৈরি করা জ্যাকেট