শিল্প ও বাণিজ্য

এবার নওগাঁ থেকে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছে ‘ব্যানানা ম্যাঙ্গো’

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: দেশের অন্যতম প্রধান আম উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁ থেকে আম্রপালি আমের পর এবার বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে ‘ব্যানানা ম্যাঙ্গো’। যুক্তরাজ্যে রপ্তানির উদ্দেশ্যে বুধবার বিকেলে তৃতীয় চালানে জেলার সাপাহার উপজেলার ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক’ থেকে ৫০০ কেজি ব্যানানা আম ও ৫০০ কেজি আম্রপালি আম ঢাকার শ্যামপুরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বৃহস্পতিবার রাতে আমের চালান যুক্তরাজ্যে পৌঁছাবে।

এর আগে গত ১৭ ও ২০ জুন সাপাহার উপজেলার ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক’ ও ‘রূপগ্রাম অ্যাগ্রো ফার্ম’-এর মালিক তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা দুই চালানে আড়াই মেট্রিক টন আম্রপালি যুক্তরাজ্যে পাঠান। বাংলাদেশ ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে তিনি যুক্তরাজ্যে আম রপ্তানি করেন।

সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুজিবর রহমান বলেন, ‘বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম চাষের জন্য উপজেলার ১৫ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মৌসুমজুড়েই এই চাষিদের বাগানে আম উৎপাদনের প্রক্রিয়া আমরা দেখভাল করেছি। এই চাষিদের উৎপাদিত ও ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত আম বিদেশে পাঠানোর জন্য উপযুক্ত।’ তিনি আরও বলেন, যে আম দেশের বাজারে দুই হাজার টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে, সেই আম রপ্তানিকারকদের কাছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন চাষিরা।

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চাষিদের মধ্যে পত্নীতলা উপজেলার রূপগ্রাম গ্রামের শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল রানার ১০৭ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা বাগানে দেড় হাজার আম্রপালি জাতের গাছ আছে। তার বাগানে দেশি বিভিন্ন প্রজাতির আমগাছ ছাড়াও বিদেশি মিয়াজাকি, থাই ব্যানানা ম্যাঙ্গো, রেড পালমার, টেনসিংটন প্রাইড, অস্টিন, গিলানি ও রুবি জাতের আমগাছ আছে। বাংলাদেশ থেকে তিনিই প্রথম ব্যানানা আম রপ্তানির সুযোগ পেলেন বলে এই কর্মকর্তা জানান।

তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, বিদেশে রপ্তানির জন্য তার বাগানে এ বছর আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কাটিমন, বারি আম-৪ ও মিয়াজাকি জাতের গাছের আমে ফ্রুট ব্যাগিং করেছেন। কারণ, রোগবালাইমুক্ত আমই বিদেশে যায়। এরপরও যেসব আম বিদেশে রপ্তানি করা হবে, সেগুলো ঢাকাতে পরীক্ষা করা হয়। ওই পরীক্ষার মাধ্যমে আমে কোনো রোগবালাই বা কীটনাশক আছে কি না, তা নিশ্চিত করা হয়। এরপর তা বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি জানালেন, যুক্তরাজ্য ছাড়াও ফিনল্যান্ড, ইতালি ও সুইডেনে আম পাঠানোর অর্ডার তিনি পেয়েছেন।

সাপাহার উপজেলা আমচাষি সমিতির সভাপতি মোতাহের হোসেন বলেন, ‘সাপাহারের আম যাচ্ছে বিদেশে। এটা খুবই খুশির খবর। সোহেল রানার মাধ্যমে বিদেশে এ অঞ্চল থেকে আম পাঠানো শুরু হলো। আশা করি, তার দেখাদেখি ভবিষ্যতে অন্য চাষিরাও বিদেশে আম পাঠাতে উৎসাহী হবেন। বিদেশে আম রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থ উপার্জনে আমরাও ভূমিকা রাখতে পারব।’ আম রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু বাধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে রপ্তানি উপযোগী প্যাকেজিং হাউস না থাকা একটি বড় সমস্যা। এ ছাড়া বর্তমানে একমাত্র নারায়ণগঞ্জের শ্যামপুরে আমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় এবং আমে রোগবালাই থাকলে ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট করানো হয়। এসব সুবিধা স্থানীয় পর্যায়ে নিশ্চিত করা হলে আম রপ্তানির ক্ষেত্রে চাষিদের আরও সুবিধা হতো।’

রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের বিষয়ে বারির ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা শরফ উদ্দিন বলেন, ‘আম রপ্তানির জন্য কৃষকদের তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। সেগুলো হলো, যে জাতেরই হোক বা স্বাদ যেমনই হোক, আম দেখতে সুন্দর হতে হবে। রোগবালাইমুক্ত ও বালাইনাশকমুক্ত আম হতে হবে। যথাযথ নিয়মে আম সংগ্রহের ৪০ থেকে ৬০ দিন আগে বালাইনাশক স্প্রে বন্ধ করে দিয়ে আমে ফ্রুট ব্যাংগিং করলে কৃষকদের এসব শর্ত পূরণ করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, আম উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত নওগাঁ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বেশ কিছু এলাকায় কোয়ারেন্টিন চেক হাউস, ফ্রুট প্যাকেজিং ও ভ্যাপার ট্রিটমেন্ট হাউস স্থাপন করার সিদ্ধান্ত সরকার ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে। সামনের মৌসুমে আমচাষিরা এর সুফল পাবেন বলে তিনি মনে করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *