বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে এখনো প্রায় ৪০ লাখ শিশু শ্রমিক কাজ করে। পুড়ে যাওয়া কারখানাটিতে ১০ বছর বয়সী শিশু শ্রমিকেরাও কাজ করেছে। তাদের অনেকেই পুড়ে মরেছেন। যদিও সরকার দাবি করছে আমরা অনেক উন্নত হয়ে গেছি। এতই যদি দেশের উন্নতি হবে, তাহলে কলকারখানাগুলোতে এত এত শিশু কাজ করছে কেন, দেশে এত শিশু শ্রমিক কেন?’
নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৈমুর আলম খন্দকার, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান, ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম ও কার্যকরী সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে কারখানা পরিদর্শন শেষে ফেরার সময় বিএনপি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আসা নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় কারখানার বাইরে বেতনের জন্য অপেক্ষমাণ শ্রমিকেরা আতঙ্কিত হয়ে কারখানা এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে আশ্রয় নেন। পরে পুলিশ ও নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি পরিদর্শনে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। এ সময় কারখানার মূল ফটকের সামনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নজরুল ইসলাম খান বলেন, কেবল অবহেলা, ভুল ও ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে এতগুলো মানুষকে অকালে জীবন দিতে হয়েছে। দেশে-বিদেশে কারখানাটির পণ্যের যতটা সুনাম কারখানার কর্মপরিবেশ সে অনুযায়ী নিরাপদ নয়। একটি ভালো কারখানায় পরিবেশ যেমন থাকার কথা, তার কোনোটাই এখানে দেখা যায়নি। অথচ এগুলো দেখার জন্য, কর্মপরিবেশ নিরাপদ করার জন্য সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে একটাই অভিযোগ, এখানে শিশু শ্রমিক কাজ করে। কিন্তু এখানকার পরিবেশ যে কাজ করার উপযোগী নয়, এত বড় ফ্লোরে যে মাত্র দুটি সিঁড়ি, সেগুলো নিয়ে তারা কথা বলেনি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের আইনে ত্রুটি আছে সত্য। কিন্তু যতটুকুই আইন আছে, সেটার বাস্তবায়ন নিয়েও অবহেলা। আইনের বাস্তবায়ন হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।’
আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে নিহত ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজায় মারা যাওয়া শ্রমিকদের আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এই কারখানার সঙ্গে বিভিন্ন বিদেশি ব্র্যান্ডের সম্পর্ক আছে। সেই ব্র্যান্ডগুলোরও দায়িত্ব আছে। সেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠানকেও দায়িত্ব নিতে হবে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া। আমরা সেখানে সহযোগিতা করতে রাজি আছি।’
দেশের কারখানাগুলোতে লাখ লাখ শ্রমিক অনিরাপদ কর্মপরিবেশে কাজ করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, নাগরিকের জীবন রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। বিনা ভোটে ক্ষমতায় আসায় তারা সেই দায়িত্ব পালনে নির্বিকার। এ কারণে সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোরও কোনো জবাবদিহি নেই।