প্রচ্ছদ

এজেন্ট ব্যাংকিং গতি এনেছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে

ধূমকেতু রিপোর্ট : এখন শহরের মত গ্রামের মানুষও ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতে পারছে। গ্রামীন মানুষের দোরগোঁড়ায় এ সুবিধা নিয়ে এসেছে এজেন্ট ব্যাংকিং। মূলত, ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতেই এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হয়।

ব্যাংকের মতই প্রায় সব সুবিধা পাওয়া যায় এ ব্যাংকিং এ। ফলে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ব্যাংকিংয়ের এ ধারা। এখন গ্রামীণ এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সংখ্যা শহরের তুলনায় ৬ দশমিক ৭ গুণ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, ১৯টি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে ২৪ লাখ ৫৭ হাজার গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। এর মধ্যে গ্রামের মানুষই ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৪ জন। বাকীরা শহরের।

এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে মোট স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ১২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এজেন্টের সংখ্যা চার হাজার ৪৯৩টি এবং যাদের আউটলেট রয়েছে ছয় হাজার ৯৩৩টি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে মোট জমা হওয়া অর্থের মধ্যে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের স্থিতি সবচেয়ে বেশি। তবে আউটলেটের সংখ্যা বেশি ব্যাংক এশিয়ার।

এদিকে গত বছর থেকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণও শুরু হয়েছে। ব্যাংক এশিয়া, আল আরাফাহ, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, মধুমতি, দ্যা সিটি ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব ব্যাংক ১৮৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণ করছে। এরমধ্যে ১৭৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংক এশিয়া।

এখন ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে। কারণ, কোন জায়গায় শাখা খুলতে হলে ব্যাংকের বড় খরচ চলে যায় ‘পজিশন’ নিতে। আর মাসে মাসে ভাড়া গোনার পাশাপাশি ব্যাংকের নিজস্ব স্টাফদের বেতন তো আছেই। এর বাইরে ব্যাংকের নতুন শাখা নেওয়ার ঝক্কি-ঝামেলাও আছে। এসব বিবেচনায় এজেন্ট ব্যাংকিং করতে বা এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া সহজ। এক্ষেত্রে ব্যাংকের বাড়তি কোন খরচ করতে হয় না।

সংশ্লিষ্ট এজেন্টই সমস্ত খরচ বহন করেন। ফলে এতে একদিকে কোন খরচ ছাড়াই ব্যাংকের লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যাও বাড়ছে কোন খরচ ছাড়াই। আর গ্রাহকরাও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খুললে পাচ্ছেন বিভিন্ন সার্ভিস।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবুল বশর বলেন, যেসব জায়গায় ব্যাংকের শাখা নেই সেখানকার মানুষ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের ব্যাংকিং প্রয়োজন মিটাতে পারছে। সাধারণ ব্যাংকিংয়ের মত তাদের মোবাইলে লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য যাচ্ছে। ফলে তাদের বিশ্বাস বাড়ছে। এতে এ ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে গ্রামীণ জনগণ এ সেবাকে খুব ভালভাবে গ্রহণ করেছে।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শুরু হয় ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে। এ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন এসেছে সেখানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ভূমিকা অন্যতম। এ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় আরো অনেক কিছু করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ভাল করছে ডাচ বাংলা ব্যাংক। এ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে এজেন্ট ব্যাংকিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এতে গ্রামের মানুষ ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে।

জানা গেছে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠি যারা ব্যাংকিং সেবা থেকে দূরে আছে তাদেরকে স্বল্প খরচে ব্যাংকিং সেবা দিতে প্রথমে চালু হয় মোবাইল ব্যাংকিং। এরপরেই একই উদ্দেশ্যে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবাও চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে ২০১৪ সালে ব্যাংক এশিয়া প্রথমে এ সেবা চালু করে।

এজেন্ট ব্যাংকিং হলো- সমঝোতা স্মারকে চুক্তির বিপরীতে এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকিং সেবা দেওয়া। কোনো ধরনের বাড়তি চার্জ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

২০১৩ সালের প্রথম নীতিমালায় প্রথমে শুধুমাত্র পল্লী এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমতি দেওয়া হলেও পরের বছর নীতিমালায় কিছুটা সংশোধন আনা হয়। সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী যেখানে ব্যাংকের শাখা নেই এমন পৌর ও শহর অঞ্চলেও এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া যায়। তবে মেট্রোপলিট্রন ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় না করার যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা আগের মতই বহাল রাখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *