পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় একটি কেন্দ্রে একই বিষয়ে একই দিনে দুইবার পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা পর ভুল কোডে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি নজরে আসে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের। পরে ওই প্রশ্ন ও খাতা প্রত্যাহার করে নির্ধারিত সেটকোডের প্রশ্নপত্রে নতুন খাতায় পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে ওই পরীক্ষার্থীদের। পরীক্ষা আশানুরূপ না হওয়ায় পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (১৫ নভেম্বর) মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী সরকারি রহমান ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ের (বিষয় কোড-১৫৩) পরীক্ষায়।
পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক সূত্রে জানা যায়, মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী সরকারি রহমান ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভেন্যুতে সকাল ১০টায় যথারীতি বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ের পরীক্ষা শুরু হয়। এতে ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৯১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ওইদিন ওই কেন্দ্রে সেটকোড-৩ এর প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও ভুলে পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হয় সেটকোড-১ এর প্রশ্নপত্র। পরীক্ষা প্রায় শেষের দিকে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের নিকট এ ভুলটি ধরা পড়লে তারা তড়িঘড়ি করে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভুল প্রশ্নপত্র এবং খাতা তুলে নিয়ে পুনরায় নির্ধারিত (সেটকোড-৩) কোডের প্রশ্ন সরবরাহ করে সময় বাড়িয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়।
পরপর একই বিষয়ে দু’বার পরীক্ষা দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।
পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম, মো. আব্দুল্লাহ, তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘পরীক্ষা প্রায় শেষ খাতা জমা দেব এই মুহূর্তে আমাদের খাতা বাতিল করে নতুন করে প্রশ্নপত্র দিয়ে পুনরায় পরীক্ষা নিয়েছে দায়িত্বরত শিক্ষকরা। আমরা কিছুই বুঝতে পারলাম না। কেন এক বিষয়ে একই দিনে দু’বার আমাদের পরীক্ষা দিতে হলো। কেউ কেউ বলছে প্রথমবার ভালো পরীক্ষা দিয়েছি দ্বিতীয়বার নতুন প্রশ্নে পরীক্ষা বেশি ভালো হয়নি তাই রেজাল্ট আশানুরূপ হবে না।
পরীক্ষা কেন্দ্রের গেটে অপেক্ষারত একজন অভিভাবক মো. হানিফ মুন্সী বলেন, ‘আমার মেয়ের পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হয়ে সাড়ে ১১টায় শেষ হওয়ার কথা কিন্তু সাড়ে ১২টা বেজে গেছে কিন্তু হল থেকে বের হচ্ছে না। শুনলাম একই পরীক্ষা নাকি দু’বার নেওয়া হচ্ছে।’
সুবিদখালী রোকেয়া খানম বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের ২৫ জন শিক্ষার্থী ওইদিন ওই বিষয়ে অংশগ্রহণ করেছে। একই কেন্দ্রের অধীনে দু’টি ভেন্যু আরকে বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সুবিদখালী রহমান ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে একটি কেন্দ্রে ভুল কোডের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করায় কারণে দু’বার পরীক্ষা দিতে হলো শিক্ষার্থীদের। এতে পরীক্ষার ফলাফলেও প্রভাব পড়বে। এই ভুলের দায় আসলে কে নেবে জানি না।’
সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের সচিব আব্দুল জলিল বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষায় ওইদিন বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ে সঠিক সময়ে সঠিক কোডেই পরীক্ষা শুরু হয়। তবে লিখিত (সৃজনশীল) পরীক্ষায় ভুলে সেটকোড-৩ এর পরিবর্তে সেটকোড-১ এর প্রশ্ন দেওয়া হয়েছিল কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবার ভুল প্রশ্ন এবং খাতা তুলে নিয়ে সঠিক প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ফেরদৌস বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে দায়ীদের বিরুদ্ধে। পরীক্ষার্থীদের ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন এ ব্যাপারে বোর্ড কর্তৃপক্ষ পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় সর্বমোট ২২১২ জন, মাদরাসার দাখিল পরীক্ষায় ৫১৮ জন এবং ভোকেশনাল থেকে ২২৪ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে কাঁঠালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ৬২৯ জন এবং সুবিদখালী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ৮৪১ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।