জাতীয়

এক কাঁথায় গা মুড়িয়ে শীত নিবারণের ব্যর্থ চেষ্টায় নগরীর ছিন্নমূলরা

হে সূর্য! শীতের সূর্য!

হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত তোমার প্রতীক্ষায়

আমরা থাকি,

যেমন প্রতীক্ষা করে থাকে কৃষকদের চঞ্চল চোখ,

ধানকাটার রোমাঞ্চকর দিনগুলির জন্যে।হে সূর্য, তুমি তো জানো,

আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব!

সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে,

এক-টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে,

কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই! 

এই হিমশীতল রাতে কবি সুকান্ত ভট্টচার্যের ‘শীতের সূর্য’ কবিতার চিত্র ফুটে উঠেছে নগরীর ফুটপাত জুড়ে।

ঢাকার পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা সেতুর নিচে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে দুই শিশু হাসিব ও শিহাব। শীতে কুঁকড়ে যাচ্ছিল তাদের ছোট্ট শরীর। পুরনো একটি কাঁথায় গা মুড়িয়ে শীত নিবারণের ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতেই প্রতিদিনের রাত কাটে তাদের। কাছে গিয়ে দেখা যায়, ফল বিক্রেতাদের ফেলে দেয়া কাগজের ছেঁড়া কার্টন দিয়ে তৈরি করেছে বিছানা। জুরাইন ও গেণ্ডারিয়া বস্তিবাসীর অবস্থাও একই রকম।

রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিস্তব্ধ হতে থাকে নগরী। কমতে থাকে পথচারীর সংখ্যা। মানুষের সঙ্গে যেন ঘুমের প্রস্তুতি নেয় ঢাকা শহর। উষ্ণতার ছোঁয়ায় মানুষ যখন ঘুমে বিভোর, তখন এ শহরে লাখও ছিন্নমূল মানুষ অপেক্ষায় থাকে কখন শেষ হবে শীতের রাত। দেখা যাবে সকালের সূর্য। কমবে শীতের কষ্ট।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) রাতে কাকরাইল, কমলাপুর রেল স্টেশন, পোস্তগোলা, শ্যামপুর, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, সদরঘাট, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ ও গুলিস্তানসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে রাতের হিমশীতল ঢাকার আকাশের নিচে শুয়ে আছে অসংখ্য ছিন্নমূল মানুষ। এদের কারোই ঘর কিংবা থাকার জায়গা নেই। নেই ভালো বিছানা।

রাত ৩টার দিকে হাইকোর্ট রাস্তার পাশে হুইল চেয়ারে বসা ৭৭ বছরের সোলায়মান মিয়া নামে অসুস্থ এক বৃদ্ধের সঙ্গে কথা হয়। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। পাঁচ ছেলের জনক। তবুও খেতে হয় ভিক্ষে করে। দিনে ভিক্ষে করেন। রাতে শুয়ে থাকেন হাইকোর্টের ফুটপাতে। শীতে কষ্ট কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। ছেলেসন্তান থেকেও আজ আমাকে খেতে হয় ভিক্ষে করে। শীতের রাতে খুব কষ্ট হয়। আমাদের কি দেখার কেউ নেই বাবা?

শীতের মৌসুমে নগরীর ছিন্নমূল মানুষের রাত কাটে অবর্ণনীয় কষ্টে। বিভিন্ন স্থানে চোখে পড়ে ফুটপাতে শুয়ে থাকা ঘরহীন মানুষের। এসব সহায়-সম্বলহীনদের কেউ হালকা বিছানা পেতে, কেউবা বিছানা ছাড়াই শুয়ে পড়ে সড়কে, ফুটপাতে অথবা গাছের তলায়, ব্রিজের নিচে। তাদের কেউ শ্রমজীবী, কেউবা নিতান্তই অসহায়।

শীত থেকে বাঁচার মতো ন্যূনতম গরম কাপরও নেই অনেকের। কখনও বিত্তবানদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত ও সংঘের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও ছিন্নমূল মানুষের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। তাছাড়া বিতরণ করা শীতবস্ত্র খুবই নিম্নমানের হওয়ায় শীত নিবারণে খুব একটা কার্যকর নয় বলে জানিয়েছে এসব মানুষেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *