রাজনীতি

একসঙ্গে দুটি দল করার সুযোগ নেই: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, ‘কারও দল করার বিষয়ে আমাদের আপত্তি নেই। তবে একসঙ্গে দুটি দল কেউ করতে পারবেন না। গঠনতন্ত্রে এটা স্পষ্ট লেখা আছে।’ বুধবার কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি এ কথা বলেন। এর আগে জিএম কাদের জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করেন।

এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয় পার্টি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে কুরআন খতম, দোয়া এবং মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দিনের শুরুতে কাকরাইলে পার্টি কার্যালয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন জিএম কাদেরসহ দলটির নেতাকর্মীরা।

জাতীয় পার্টির নাম ব্যবহার করে একটি কমিটি গঠন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এ সময় আরও বলেন, ‘এটা আমরা জানি না। এটা আমরা গ্রহণ করিনি।’ জিএম কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাজনৈতিক দল করার অধিকার যে কোনো মানুষেরই আছে। তবে কেউ একসঙ্গে দুটি দল করতে পারবেন না। কেউ দল করতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন দরকার হয়। সেটা না হলে নির্বাচন করতে পারবেন না।’

লকডাউনের সমালোচনায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ লকডাউন কখনো কার্যকর হবে না। অসহায় দরিদ্র মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করেই লকডাউন দিতে হয়। গ্রামের মানুষ খাবার না পেলে কাজে বের হবেন। তাই লকডাউন দেওয়ার আগে গরিব-দুঃখী-অসহায় মানুষের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা করতে হবে।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, টিকার অভাবে জনগণ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গ্রামের মানুষ টিকা পাচ্ছেন না। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার নেই, নার্স নেই, ওষুধ নেই। চিকিৎসার অভাবে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছেন। জিএম কাদের বলেন, মেগা উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে। অথচ জনগণ চিকিৎসা, খাদ্য নিরাপত্তা পাচ্ছে না। মানুষ মারা যাচ্ছে আর সরকার উন্নয়নের কথা বলছে। আমরা এমন উন্নয়ন চাই না।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, দলীয় বিবেচনা না করে করোনাকালে প্রকৃত দরিদ্র পরিবার প্রতি মাসে অন্তত ১০ হাজার টাকা সহায়তা দিতে হবে। তাহলেই বিপর্যস্ত মানুষ ঘর থেকে বের হবে না, লকডাউন কার্যকর হবে। তিনি বলেন, জিডিপির শতকরা এক ভাগ বিতরণ করলেই করোনাকালে কর্মহীন মানুষ পরিবারসহ ভালো থাকবে।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১০ হাজার মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি। তার অর্থায়ন এবং জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ব্যবস্থাপনায় খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানে জিএম কাদের বলেন, সরকার শুধু আশ্বাস দিয়ে বলে করোনার টিকা আসছে। কিন্তু কখন আসবে, কীভাবে আসবে বা কোথা থেকে আসবে তা বলতে পারছে না। তাই করোনার টিকা নিয়ে দেশবাসীর মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। সারা বিশ্ব যখন ভ্যাকসিন দিয়ে করোনা মোকাবিলা করছে, তখন আমাদের দেশ লকডাউন দিয়ে করোনা মোকাবিলা করতে চাচ্ছে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, পল্লীবন্ধুর শাসনামল মানুষ মনে রেখেছে, তাই সাধারণ মানুষ আবারও জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায়। তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু ছিলেন দেশপ্রেমিক এবং জননন্দিত একজন নেতা। তিনি দুর্নীতি, দুঃশাসন, বঞ্চনা, গঞ্জনামুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে কাজ শুরু করেছিলেন। নতুন বাংলাদেশ গড়তে পল্লীবন্ধু জীবদ্দশায় বেশ কিছু কল্যাণকর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলেন। তার রেখে যাওয়া কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ব। দেশের মানুষকে মুক্তি দিতেই জাতীয় পার্টির রাজনীতি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি বলেন, জাতীয় পার্টি একটি আদর্শ। জাতীয় পার্টি জাতীয় সংসদে যেভাবে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছে, আমার মনে হয় না এমনটা আর কেউ করতে পেরেছে। তিনি বলেন, টিকা নিয়ে যদি দুর্নীতি হয় তার জবাব একদিন দিতেই হবে।

দলটির মহাসচিব জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু বলেন, করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও মন্ত্রীরা উদ্ভট কথা বলছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, করোনার বিস্তার রোধ করা নাকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। আর এক বছর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, আমরা নাকি করোনার চেয়েও শক্তিশালী। তিনি বলেন, সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে করোনা মোকাবিলা করতে হবে। সরকারের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণেই করোনা ভয়ানক হারে ছড়িয়ে পড়েছে।

দলটির কো-চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেখেছে কিন্তু পল্লীবন্ধু এরশাদের কথা ভোলেনি। তাই জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি আগামী দিনে সরকার গঠন করে দেশ থেকে চিরতরে দুর্নীতি বিদায় করবে।

সভাপতির বক্তৃতায় সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী হচ্ছেন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যর্থ মন্ত্রী। স্বাধীনতার পর এমন ব্যর্থ মন্ত্রী কেউ দেখেনি। অবিলম্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন-প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া, মো. এমরান হোসেন মিয়া, নাজমা আক্তার এমপি, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, জহিরুল ইসলাম জহির, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. গোলাম মোস্তফা, হেনা খান পন্নি, মো. জহিরুল আলম রুবেল, হারুন আর রশীদ, ভাইস চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান খান, আহসান আদেলুর রহমান আদেল এমপি, সালমা হোসেন, তারেক এ আদেল, এইচএম শাহরিয়ার আসিফ, যুগ্ম-মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, শাহিদা রহমান রিংকু, আব্দুল হামিদ ভাসানী, একেএম আশরাফুজ্জামান খান, মো. বেলাল হোসেন, ইকবাল হোসেন তাপস, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য-নির্মল দাস, মো. হেলাল উদ্দিন, এনাম জয়নাল আবেদীন, সাইফুল ইসলাম, হুমায়ুন খান, সৈয়দ মো. মঞ্জুর হোসেন, আনোয়ার হোসেন তোতা, আবু জায়েদ আল মাহমুদ মাখন সরকার, মাসুদুর রহমান মাসুম, সুলতান মাহমুদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসহাক ভূঁইয়া, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, মিজানুর রহমান মিরু, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, খোরশেদ আলম খুশু, যুগ্ম-সম্পাদক আবু তৈয়ব, মাহমুদ আলম, মো. শাহজাহান কবির, জুবের আলম খান রবিন, মো. শহীদ হোসেন সেন্টু, শারমিন পারভীন লিজা, আখতার হোসেন দেওয়ান, আজহারুল ইসলাম সরকার, সুজন দে, মো. জাকির হোসেন মৃধা, মো. ইব্রাহীম আজাদ, নুরুল হক নুরু, মীর সামশুল আলম লিপ্টন, হাফেজ ক্বারি ইছারুহুল্লা আসিফ, গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় নেতা শেখ মাসুক রহমান, শেখ সারোয়ার হোসেন, মাহবুবুর রহমান খসরু, রিতু নুর, মিনি খান, আলমগীর কবির মজুমদার, গোলাম মোস্তফা আঙ্গুর, জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি মো. ইব্রাহীম খান জুয়েলসহ দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *