ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর চার দশক পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাঙালি ভুলতে পারেনি তাকে। এখনও বাঙালির কাছে সেরা অভিনেতা তিনিই। ২০২১ সালের ২৪ জুলাই তার মৃত্যুর ৪১ বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত মোট ২১২টি ছবি করেছেন উত্তম কুমার। তার সবকটি ছবিই বাংলা সিনেমার অলঙ্কার। অভিনয় ছাড়াও পরবর্তীতে প্রযোজক, পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও গায়ক হিসেবেও কাজ করেছেন উত্তম কুমার। ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ও ‘চিড়িয়াখানা’য় অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
১৯৮০-র ২৪ জুলাই উত্তম কুমার চলে গেলেন। এর পরেই আগস্টে উত্তম স্মরণে একত্রিত হয়েছিলেন তার সঙ্গে কাজ করা সমস্ত তারকা অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক। সেখানেই কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিত রায় উত্তম কুমার সম্পর্কে তার অনুভূতি তুলে ধরেছিলেন সত্যজিৎ। তিনি জানান, ‘‘উত্তমকে যখন প্রথম পর্দায় দেখি তখনও আমি পরিচালনায় আসিনি। সেই সময় শুনেছিলাম, বাংলা ছবিতে নতুন নায়ক এসেছেন। শুনে তাঁকে দেখার আগ্রহ হয়েছিল। আমি একটানা উত্তমের তিনটি ছবি দেখেছিলাম। তিনটিরই পরিচালক নির্মল দে। প্রথম দেখাতেই ভাল লেগেছিল উত্তমকে। উত্তমের চেহারা সুন্দর। তার উপস্থিতি যথেষ্ট আকর্ষণীয়। এবং তার অভিনয়ে মঞ্চাভিনয়ের কোনও ছাপ নেই। ফলে, আমি কিন্তু ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যত সেই সময়েই দেখতে পেয়েছিলাম।’’
উত্তমের সঙ্গে সত্যজিতের কাজ করার সুযোগ অনেক পরে এসেছিল। তত দিনে উত্তম কুমার তারকা। প্রায় প্রতি বাংলা ছবিতে তিনিই নায়ক। সুচিত্রা সেনের সঙ্গে জুটি বেঁধে একের পর এক হিট ছবি উপহার দিচ্ছেন। পরিচালকের কথায়, ‘‘উত্তম তত দিনে হলিউডের ব্যাকরণ মেনে আক্ষরিক অর্থেই তারকা।’’ তার পরেই তার মোক্ষম প্রশ্ন, ‘‘একই সঙ্গে তিনি কি অভিনেতা হয়ে উঠতে পেরেছিলেন?’’
প্রশ্নের উত্তরও সত্যজিৎ নিজেই দিয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি নাম নিয়েছিলেন কিংবদন্তি হলিউড তারকা গ্রেগরি পেকের। যার অভিনয় প্রতিভা চাপা পড়ে গিয়েছিল ‘স্টারডম’-এর নিচে। পরিচালকের দাবি, ‘‘গ্রেগরি পেককে কেউ কোনও দিন ভুলবে না। তার পরেও বলব, তারকার খ্যাতি সামলাতে না পারলে এ ভাবেই খ্যাতির বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তারকাসুলভ হয়ে ওঠার পরেও উত্তমের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা ছিল। যা গ্রেগরি পেক দেখাতে পারেননি।
তাই ‘নায়ক’ পরিচালনার আগে পরিচালক এমন একটি দৃশ্যকল্প ভেবেছিলেন যার সঙ্গে অনায়াসে মহানায়ক উত্তম নিজেকে মিশিয়ে দিতে পারবেন। উত্তমের জীবনের কিছুটা নিয়েই তিনি তৈরি করেছিলেন তার ছবি। সত্যজিতের ভাবনা শুনে এক কথায় রাজি হয়েছিলেন উত্তম কুমার। কেবল পরিচালককে ভরসা করে নায়কসুলভ সমস্ত আচরণ সরিয়ে স্বাভাবিক অভিনয় করেছিলেন। এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের ১১০তম ছবি। ছবিটি করার সময় সদ্য বসন্ত থেকে ভুগে উঠেছেন। মুখে বেশ দাগ। তার পরেও সত্যজিতের কথা মেনে এক ফোঁটাও মেক আপ করেননি তিনি। বাকিটা ইতিহাস। পরিচালক নিজে স্বীকার করেছেন, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি চরিত্রে ঢুকে যেতে পারতেন। চরিত্র হয়ে উঠতেন। তার আগে খুঁটিনাটি আলোচনাও সেরে নিতেন। ছবিতে এমন অনেক দৃশ্য আছে যেটা উত্তম মাথা খাটিয়ে বের করেছিলেন। আমি অবাক হয়ে দেখতাম তার সহজাত অভিনয় প্রতিভায়।’’