দেবযানী দত্ত :
করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে আজ থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত চলবে সীমিত লকডাউন। এর সাথে সকল গণপরিবহন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও অফিস খোলা রয়েছে। এ অবস্থায় বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ জনগনকে হতে হচ্ছে ভোগান্তির শিকার। বৃহস্পতিবার থেকে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে সারাদেশে।
এদিকে, গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও অফিস খোলা থাকায় বাইরে বেরোতেই হচ্ছে। সকাল থেকে রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়ি পাননি অফিসগামীরা। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনেককে। কেউ নিরুপায় হয়ে পায়ে হেঁটেই অফিসের দিকে ছুটেছেন।
আজ সোমবার সকাল ৮টায় রাজধানীর আবদুল্লাহপুরে দেখা গেছে, কয়েকশ মানুষ জটলা পাকিয়ে আছে। কোনো বাস নেই। বিকল্প বাহনও খুব একটা নেই। সিএনজিচালিত অটোরিকশা দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া হাঁকাচ্ছে। তাই অনেকে ব্যর্থ মনোরথে হাঁটা শুরু করেছেন গন্তব্যের দিকে।
ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল থাকলেও তারা সড়কে চলবে কী চলবে না— এ দ্বিধায় রয়েছে। একজন উবার চালককে আবদুল্লাহপুর থেকে কুড়িল চৌরাস্তা যাবেন কিনা জিজ্ঞাসা করলে রাজি হন। ভাড়া হাঁকেন ৫০০ টাকা। এতটুকু দূরত্বে এত ভাড়া কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পথে পথে যে ব্যারিকেড তাতে সামনে এগোনো যাবে কিনা নিশ্চিত নয়। ধরলেই মামলা, গুনতে হবে তিন-চার হাজার টাকা।
সিএনজি অটোরিকশায়ও ভাড়া আকাশচুম্বী। বাধ্য হয়েই যাত্রীরা ১০০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। তাও আবার এক অটোরিকশায় চারজন বসে গাদাগাদি করে।
এদিকে গণপরিবহনের সংকটে ঢাকার সড়কে দাপট দেখাচ্ছেন রিকশা চালকরা। কিন্তু পকেট কাটা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। সুযোগ পেয়ে কয়েকগুণ ভাড়া হাঁকছে তারা। গাড়ি না পেয়ে অনেকে বাড়তি ভাড়া দিয়েই গন্তব্যের দিকে রওনা হয়েছেন।
সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় দেখা গেছে যানজট। দুপাশের সড়কজুড়ে ব্যক্তিগত গাড়ি আর রিকশার সারি। এতে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
এদিকে, অফিসগুলোকে তাদের কর্মী আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হলেও বহু প্রতিষ্ঠানই তা করেনি। ফলে অফিসগামীদের মাঝে ভোগান্তির সেই পুরনো চিত্রই দেখা যাচ্ছে।
গাড়ি না পেয়ে কেউ কেউ পিকআপ, রিকশা ভ্যানে উঠেও অফিসে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এভাবেই রাজধানীতে অফিসগামী যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর শাহবাগ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, কারওয়ানবাজার, নীলক্ষেত, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, আসাদগেটসহ অন্যান্য স্থানের চিত্রও প্রায় একই।
সম্প্রতি দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও সংক্রমণ হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সারা দেশে ১৪ দিনের কঠোর শাটডাউন দেওয়ার সুপারিশ করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
সুপারিশের আলোকে সারা দেশে নতুন করে বিধিনিষেধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তিন দিনের সীমিত লকডাউন দিয়ে রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে সর্বাত্মক লকডাউন।