ধূমকেতু রিপোর্ট : করহার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন জেলা চেম্বারের সভাপতিরা। দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ী নেতারা অভিন্ন সুরে বলেছেন, তারা স্তরভিত্তিক ভ্যাট চান। আয়করের হার কমানোও তাদের দাবি। পাশাপাশি রাজস্ব কর্মকর্তাদের হয়রানি থেকে মুক্তি চান।
তবে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় রাজস্ব আহরণের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে তারা বলেছেন, উপজেলা পর্যায়ে ভ্যাট ও আয়করের আওতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে জেলা চেম্বারগুলো সরকারকে সহযোগিতা করবে।
মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত দেশের ৬৪টি জেলা চেম্বারের সমন্বয়ে গঠিত কাউন্সিল অব চেম্বার প্রেসিডেন্টের সভায় বিভিন্ন জেলা চেম্বারের সভাপতিরা এমন মতামত দেন। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এফবিসিসিআইর প্রস্তাব তৈরিতে জেলা চেম্বারগুলোর মতামত নেওয়ার জন্য এ সভার আয়োজন করা হয়।
রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, সহসভাপতি দেওয়ান সুলতান আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বৈঠকে বেশ কয়েকজন জেলা চেম্বার সভাপতি ফজলে ফাহিমকে আগামীতে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দেখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। বর্তমান সভাপতিও তাদের এই বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, ব্যবসায়ী সমাজকে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলী ফজলে ফাহিমের মধ্যে রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছেন। সে নির্দেশনা সব ব্যাংক বাস্তবায়ন করেনি। দুঃখজনক হচ্ছে, সম্প্রতি কোনো কোনো ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার ব্যবসা-বিনিয়োগের সসমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এজন্য ব্যবসায়ীদের এখন দাবি হতে হবে সুনির্দিষ্ট।
শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, বড় রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য অর্জনে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ দেওয়া হয়। আবার রাজস্ব কর্মকর্তারা অনেক সময় হয়রানিও করে থাকেন। ব্যবসায়ীরা হয়রানিমুক্ত পরিবেশ চান। বর্তমানে যারা করের আওতায় নেই, তাদের করের আওতায় আনলে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত চাপ দেওয়ার দরকার হবে না।
তিনি বলেন, নতুন অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, একক ভ্যাটহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। স্তরভিত্তিক ভ্যাটহার হবে। করপোরেট কর ও আয়কর হার কমাবে। সরকার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন বাড়বে, তেমনি রাজস্ব আয়ও বেশি হবে।
রংপুর মেট্রোপলিটান চেম্বারের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, করের আওতা বাড়ালেই রাজস্ব আয় বাড়বে। বর্তমানে জেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকার কর ও ভ্যাট সংগ্রহ করে। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, যারা কর ও ভ্যাট দিতে পারে।
রাজশাহী চেম্বারের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, অবকাঠামো ঘাটতি ও নীতি সহায়তার অভাবে জেলা পর্যায়ে শিল্প হচ্ছে না। রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে জেলা পর্যায়ে শিল্পায়নের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোর্শেদ কক্সবাজারসহ সারাদেশের পর্যটনশিল্প উন্নয়নে নীতি সহায়তা দেওয়া ও শিল্পে ব্যবহারের লবণ আমদানিতে কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। রাঙামাটি চেম্বারের সভাপতি বেলাল হোসেন চৌধুরী বলেন, রাঙামাটি জেলা থেকে বর্তমানে ৭৫ কোটি টাকা আয়কর আদায় হয়, কর ব্যবস্থা সহজ হলে করের পরিমাণ চারগুণ বাড়বে।
সিলেট ওমেন চেম্বারের সভাপতি স্বর্ণলতা রায় বলেন, জেলা বা উপজেলা শহরে নারীরা যে ব্যবসা করেন সেখানে অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভ্যাট নিলে নারী উদ্যোক্তারা ব্যবসায় দাঁড়াতে পারবেন না।
কিশোরগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মুজিবুর রহমান বেলাল শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষামূলক উৎপাদনের সময় ভ্যাট আরোপ না করার প্রস্তাব করেন। চুয়াডাঙ্গা চেম্বারের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মানিক বলেন, দর্শনা স্থলবন্দর, জীবননগর স্থলবন্দর অনেকদিন ধরে বন্ধ। এসব বন্দর চালু করলে রাজস্ব আয় বাড়বে।