প্রচ্ছদ

উপকূলকে দস্যুমুক্ত করতে ঘোষণা র‍্যাবের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: সুন্দরবনের পর এবার সমুদ্র উপকূলকে দস্যুমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে র‌্যাব। রবিবার (১২ ডিসেম্বর) বরগুনার পাথরঘাটায় স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় র‌্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এই ঘোষণা দেন। গত তিন বছর উপকূলীয় এলাকার জেলেরা সমুদ্রে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করতে পারলেও সম্প্রতি জলদস্যুদের উৎপাতে অতিষ্ঠ। জেলেদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযান শুরু করেছে র‌্যাব। ইতিমধ্যে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুজন দস্যু মারা গেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক ও বর্তমান র‌্যাব কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বাহিনীটির মহাপরিচালক বলেছেন, আমরা দেশের সংবিধান, আইন-বিধি অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। সব দিক থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রতিটি বিষয় যাচাইবাছাই করা হয়। আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই। আইন এবং বিধির আলোকে র‌্যাবের কার্যক্রম চলছে।

জলদস্যুদের উৎপাতে অতিষ্ঠ জেলেদের নিয়ে গতকাল দুপুরে পাথরঘাটায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। সেখানে জেলেরা কীভাবে দস্যুতার শিকার হচ্ছেন সেগুলো তুলে ধরেন। র‌্যাব মহাপরিচালক ছাড়াও মতবিনিময় সভায় বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল, বরিশালের ডিআইজি আখতারুজ্জামান, র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ, র‌্যাব-৮ এর সিও জামিল হাসান, র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মশিউর রহমান, গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন, বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান ও বরগুনার এসপি জাহাঙ্গীর মল্লিক বক্তব্য রাখেন।

জেলেদের পক্ষে ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, অনেক দিন আমরা দস্যুমুক্ত ছিলাম। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই দস্যুতা বেড়ে গেছে। কারণ, হিসেবে তিনি যারা আত্মসমর্পণ করেছে তাদের দিকে র‌্যাবের বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার দাবি করেন। র‌্যাব যদি সাগরে টহল বাড়ায় তাতেও দস্যুতা অনেক কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

কিছুদিন আগে দস্যুদের অপহরণের শিকার জেলে কামাল হোসেনের মা মরিয়ম বেগম বলেন, আমার ছেলেকে অপহরণ করে ওরা ৩ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। আমি অনেক কষ্টে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনি। পরে র‌্যাব তাদের গ্রেফতার করে সেই টাকা উদ্ধার করে দিয়েছে। দস্যুদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের আর্থিক অনুদান দেন র‌্যাব মহাপরিচালক।

এর আগে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। এরপরেও দু-একজন দস্যু চেষ্টা করেছে তাদের কর্মকাণ্ড চালাতে। কিন্তু র‌্যাব কঠোরভাবে মোকাবিলা করেছে। র‌্যাব মহাপরিচালক ঘোষণা দেন, উপকূলেও আর কাউকে দস্যুতা করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, যেসব ডাকাত-দস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছে আমরা তাদেরকে ঘর দিয়েছি, দোকান দিয়েছি, গরু ও জালসহ নৌকা দিয়েছি। সব করেছি আমাদের অর্থায়নে। সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে এসব করেছি। কারণ তারা যাতে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আসতে পারে।

র‌্যাব ডিজি বলেন, যারা এখনো আত্মসমর্পণ করেনি তাদেরকে বলেছি দস্যুপনা সম্মানজনক কাজ না। কারণ, একজন দস্যুর সন্তান স্কুলে গিয়ে বলতে পারে না তার বাবা কী করে? সেই বাচ্চা লজ্জিত হয়। তিনি বলেন, আমরা সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করেছি, সাগরও নিয়ন্ত্রণে আছে। সাগরের দস্যুপনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনব। এটা নিয়ে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মুষ্টিমেয় কয়েক জনের কারণে এখানে একটা অস্থির পরিবেশ বিরাজ করবে এটা কিন্তু আমরা হতে দেব না।

এর আগে রবিবার দুপুরে বরগুনার পাথরঘাটা লঞ্চঘাটে জেলেদের সঙ্গে কথা বলেন র‌্যাব মহাপরিচালক। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের সংবিধান, আইন বিধি অনুযায়ী আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আমরা যখন কাজ করি আমাদের এই কার্যক্রম জুডিশিয়াল সিস্টেমে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এটা তদন্ত করে থাকে। থানা পুলিশ এটা তদন্ত করে। আমরা কিন্তু তদন্ত করি না। এই তদন্তের পর যদি মামলা করার প্রয়োজন হয় মামলা হয়ে যায়। সেই মামলার তদন্ত হয়। এরপর জুডিশিয়াল সিস্টেমে সেটা কোর্টে যায়। এরপর যাচাইবাছাই হয়। তারপর সেই সিদ্ধান্ত হয়, এরপরই আমাদের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এছাড়া আমাদের স্বাধীন মিডিয়া আছে, সুশীল সমাজ আছে সব দিক থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রতিটি বিষয় যাচাইবাছাই হয়। এখানে আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনোই সুযোগ নেই। সবকিছু আইন এবং বিধির আলোকে সংগঠিত হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

ওমিক্রন নিয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *