ব্যক্তিত্ব

উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হচ্ছে হাসান আজিজুল হককে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ‘ভীষণ অসুস্থ’ বলে জানিয়েছেন তার ছেলে ইমতিয়াজ হাসান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আজ শনিবার সকাল ৯টায় প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিককে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হবে। জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে তার চিকিৎসা শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু।

তিনি জানান, সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলামের উপস্থিতি এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ছেলে ইমতিয়াজ হাসান বলেন, ইলেক্ট্রোলাইট ইম্ব্যালেন্স তার বাবার প্রধান সমস্যা। এছাড়া হার্টের সমস্যা আছে। পড়ে গিয়ে তিনি কোমরেও আঘাত পেয়েছিলেন। সঙ্গে আছে ডায়াবেটিস। এখন তার শারীরীক অবস্থা খারাপ। বাসায় অন্তত সাতজন চিকিৎসক তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

এদিকে, ইমতিয়াজ হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আব্বাকে নিয়ে কখনো কিছু লেখা হয়ে ওঠে না। বাকি দুনিয়ার কাছে যে রূপেই পরিচিত হোন, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে আমার জন্য নিরন্তর বিস্ময় সৃষ্টি করে চলেছেন আমার বাবা। মোটের উপর গল্পকার হিসেবেই সবাই চেনেন হাসান আজিজুল হককে। ২০০৬-এ তার বহুপ্রার্থিত উপন্যাস ‘আগুনপাখি’ শেষ করে আত্মজীবনীতে হাত দিলেন। ধরে নিয়েছিলাম, আব্বার হাতে আর নতুন কোন তাস নেই! কিন্তু আশি পেরনোর পরেও কলম থেকে নতুন নতুন কাজ বের করে আমায় অবাক করেছেন। লিখেছেন অনুবাদগ্রন্থ (আর্নেস্টহেমিংওয়েঃ কিলিমানজারোর বরফপুঞ্জ ও অন্যান্য গল্প), ভ্রমণবৃত্তান্ত (লন্ডনের ডায়েরি) আর কবিতার বই (সুগন্ধি সমুদ্র পার হয়ে)। ‘বাপ, তোর সোনার কলম হোক’-মায়ের দোয়া ফলেছে তার জীবনে। মানুষের দোয়াও পেয়েছেন নিশ্চয়।’

তিনি লেখেন, ‘মাঝে মাঝে সে প্রমাণ পাই যখন ভাড়া মেটানোর সময় বৃদ্ধ অটোচালক হঠাৎ তার কুশল জানতে চেয়ে চমকে দেন অথবা শহরের রাস্তায় অচেনা কেউ এগিয়ে এসে তার কথা জানতে চান। আম্মা মারা যাওয়ার পর থেকেই সবার মাঝে থেকেও আব্বা বড় একা, তাকে আরো একা করে দিয়েছে কোভিড-১৯ অতিমারী। ছেলেবেলা থেকে দেখে আব্বার ভাত-তরকারির সাথে সাথে মানুষের সঙ্গ-হাসি-গল্প-গান দরকার হয়। সঙ্গত কারণেই এ সময় সেটা পাচ্ছেন না। কোভিডের মরণকামড় এড়িয়ে অন্যান্য বার্ধক্যজনিত সমস্যা সামাল দেয়া কতটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা ভুক্তভোগীরা জানেন।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আব্বা বয়সের ভারে শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন অনেকটা, মনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে একটু। আড়ালেও কি চলে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে? গত এক মাস যাবৎ তিনি ভীষণ অসুস্থ, ছোট একটি শিশুর মতোই আমাদের ওর পরিচর্যা করতে হয়। পরিবারের মানুষ আর গুটিকয়েক শুভানুধ্যায়ী ছাড়া আর কেউ সে কথা জানেন না। অনেকেই হয়তো মন চাইলেও তার খবর নিতে পারেননি বা যোগাযোগ করতে পারছেন না। সে জন্যই এটুকু লেখা। আপনাদের দোয়ায়, প্রার্থনায় তাকে রাখবেন।’

কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের বয়স এখন ৮২। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ বছর শিক্ষকতার পর ২০০৪ সালে তিনি অবসর নিয়েছেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শিক্ষকদের আবাসন এলাকা ‘বিহাস’-এ নিজের বাসায় থাকছেন। অসুস্থ হলেও তিনি এ বাসাতেই আছেন।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *