ঈদ বাজারে জাল নোট

এবার ঈদ বাজারে জাল নোট এর ছড়াছড়ি। রাজধানীর শাহজাদপুরের সুবাস্তু নজরভ্যালি শপিং মলের কাপড়ের দোকানি মোরশেদ আলম জানালেন একটি ঘটনার কথা। শুক্রবার তাঁর দোকানে ছিল ঈদের কেনাকাটার ভিড়। এক ক্রেতা দেড় হাজার টাকায় পাঞ্জাবি কিনে তিনটি ৫০০ টাকার নোট দিলেন। ভালো করে যাচাই করতেই তাঁর মনে হলো একটি নোট জাল।

চ্যালেঞ্জ করলে ক্রেতা বলেন, তাঁকে দিয়েছেন আরেক দোকানি। ভিড়ের মধ্যে ঝামেলা এড়াতে নোটটি বদলে দিতে বলেন মোরশেদ। ক্রেতা নোটটি বদলে আসল নোট দিয়ে চলে যান।

যমুনা ফিউচার পার্কের দক্ষিণ গেটের ওয়েস্টার্ন ফ্যাশনের মালিক শিহাব উদ্দিন মিঠু জানান, পাঁচ দিন আগে তিনি একটি এক হাজার টাকার জাল নোট পেয়েছেন। ক্রেতাকে দেখে খারাপ লোক মনে হয়নি। তাঁকেও হয়তো কেউ দিয়ে দিয়েছে। পরে ক্রেতাকে নোটটি পাল্টে দিতে বললে পাল্টে দিয়েছেন। ঈদের সময় সতর্কতার সঙ্গে ক্রেতার কাছ থেকে টাকার নোট বুঝে নিতে হচ্ছে।

ঈদ কেনাকাটার ভিড়ে রাজধানীর প্রায় সব মার্কেটে এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। ঈদ বাজারে জাল টাকার নোট চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে কারবারিরা। ঈদের কেনাকাটার সময় তাড়াহুড়া ও ভাংতি নোটের প্রয়োজনীয়তার সুযোগ নিচ্ছে জাল নোট কারবারি চক্র। গত দুই বছর ঈদে কেনাকাটা কম হলেও এবার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জাল নোট কারবারিরা। এদের অনেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে ছয় মাস আগে থেকে গোপন কারখানায় জাল নোট তৈরি শুরু করে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে নজরদারি বাড়িয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত এক মাসে দুটি কারখানা থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

তদন্তকারীরা বলছেন, দ্রুত নিখুঁত জাল নোট তৈরি করতে বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করছে চক্রের সদস্যরা। তারা এখন পাঁচ শ ও এক হাজার টাকার নোটের পাশাপাশি ৫০ টাকার নোটও জাল করছে। ডেমরা ও লালবাগের নবাবগঞ্জ থেকে দুটি চক্রের কয়েক কোটি টাকার জাল নোট তৈরির সরঞ্জাম ও উপাদান জব্দ করা হয়েছে। তবে জামিনে থাকা আরো কিছু চক্র জাল নোট ছাড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ডিবির সূত্রে জানা যায়, গত ১২ এপ্রিল লালবাগের নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধ এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২১ লাখ টাকা ও দেড় লাখ রুপির জাল নোটসহ জাহাঙ্গীর আলম, আলী হায়দার, তাইজুল ইসলাম লিটন ও মহসিন ইসলাম মিয়া নামের চারজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। জব্দ করা হয় জাল নোট তৈরির বিভিন্ন উপকরণ ও সরঞ্জাম। জাল টাকা ও রুপির একটি চালান সংগ্রহের জন্য নাটোর থেকে ঢাকায় এসেছিল কারবারি জাহাঙ্গীর আলম। পাঁচ মাস আগে বাসা ভাড়া নেয় চক্রটি। রমজানে বিপুল পরিমাণ জাল নোট তৈরি করে দেশজুড়ে সরবরাহ করতে চেয়েছিল তারা।

এর আগে গত জানুয়ারি মাসে পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের জাল নোটসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তদন্তকারীরা জানান, ঈদকে সামনে রেখে তখনই চক্রটি জাল নোট তৈরি ও বিক্রি শুরু করেছিল।

ডিবির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘লালবাগের কারখানার মালিক তাইজুল ইসলাম লিটন জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে—ঈদ সামনে রেখে রাত-দিন তারা জাল নোট তৈরি করছিল। লিটন তার কারখানায় মাসে কোটি টাকার জাল নোট তৈরি করতে পারত। ’

গত ১৯ মার্চ ডেমরা থানার সারুলিয়া টেংরার দেলোয়ার হোসেনের তিনতলা বাড়ির নিচতলায় পূর্ব পাশের রুম থেকে জাল নোট তৈরির উপকরণসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডেমরা থানার ওসি খন্দকার নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাল নোট ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এই চক্রের মূল হোতা নাবিলসহ আরো কয়েকজন পলাতক রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবসার কথা বলে বাসা ভাড়া নিয়ে জাল নোটের কারখানা খোলে চক্রটি। জাল নোট তৈরির জন্য তারা একটি অ্যাপ ব্যবহার করত। সেই অ্যাপে ৫০ টাকার নোটের ফরম্যাট রয়েছে। যার মাধ্যমে প্রিন্ট দিলেই হুবহু ৫০ টাকার নোট বের হয়ে আসত। ’

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘জাল নোট কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি ঈদের আগে বিভিন্ন স্থানে আমাদের নজরদারি থাকছে। সব ক্রেতা-বিক্রেতাকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *