ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: বাড়ির ভেতর ঢুকতেই বিশাল আকৃতির কালো রঙের ষাঁড়টি চোখে পড়ে। ষাঁড়টির পিঠে বসে আছে লাল ফ্রক পরা এক শিশু। আর ষাঁড়টির নিচ দিয়ে আসা-যাওয়ার মাধ্যমে খেলা করছে অন্য শিশুরা। শিশুদের কারও মনে ষাঁড়টিকে নিয়ে ভয় না দেখে একটু অবাক হতে হলো।
ষাঁড়টির লালন-পালনকারী খামারি আমিরুল ইসলাম বলেন, ঘন কালো সুঠাম দেহের অধিকারী ষাঁড়টির নাম তিনি দিয়েছেন কালা তুফান। তার মধ্যে বিন্দুমাত্র রাগ নেই। বাড়ির সবার সঙ্গে তার ভাব। সব সময় কেউ না কেউ গায়ে হাত বুলিয়ে তাকে আদর করে। বাচ্চাদের পিঠে বসিয়ে দিলেও বিরক্ত হয় না। সব সময় খোশমেজাজে থাকে।
আমিরুলের বাড়ি নাটোর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের হয়বতপুর গ্রামে। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে তিনি কালা তুফানকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর এতেই ষাঁড়টি সবার নজরে এসেছে। ১ হাজার ৩২৪ কেজি (৩৩ দশমিক ১ মণ) ওজনের ষাঁড়টি দেখতে প্রতিদিন কৌতূহলী মানুষের ভিড় জমছে।
আমিরুল বলেন, ‘আমি পড়ালেখা তেমন একটা করতে পারিনি। তবে সব সময় ভালো কিছু একটা করার প্রবল ইচ্ছা ছিল। সেই ইচ্ছা থেকেই আমি প্রায় তিন বছর আগে হলস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়ের একটা বাছুর কিনে লালন-পলন শুরু করি। ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকায় কেনা তখনকার বাছুরটির ওজন ছিল ৬ মণ। শুরু থেকেই আমি তাকে চিড়া, গুড় ও অ্যাংকরের ভুসি খাওয়ানো শুরু করি। এতে ষাঁড়টির খাওয়ার রুচি বেড়ে যায়। বয়স ও ওজন হিসাব করে তাকে খাওয়াতে থাকি। বর্তমানে ষাঁড়টি প্রতিদিন ৭ কেজি ভুসি, ২ কেজি চিড়া, ২ কেজি গুড় ও প্রায় ৯০ কেজি পানি খায়। এই সময়ে কখনোই ষাঁড়টির রোগবালাই হয়নি। মোটাতাজাকরণের জন্য বিন্দুমাত্র ওষুধও খাওয়ানো হয়নি।’
১ হাজার ৩২৪ কেজি (৩৩ দশমিক ১ মণ) ওজনের ষাঁড়টি দেখতে প্রতিদিন কৌতূহলী মানুষের ভিড় জমছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা কালা তুফান নামের ষাঁড়টি অনেক আকর্ষণীয় হয়েছে। আকৃতির তুলনায় ষাঁড়টির শরীরে চর্বির পরিমাণ কম। এ কারণে লালনকারী খামারি ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে তিনি মনে করেন।
আমিরুল বলেন, ষাঁড়টি তার পরিবারের একজন প্রিয় সদস্য হয়ে গেছে। তবু বাস্তবতার তাগিদে তিনি ষাঁড়টি বিক্রি করে দিচ্ছেন। তবে কদর বোঝেন, এমন শৌখিন কোনো লোক ষাঁড়টি কিনলে তিনি সবচেয়ে খুশি হবেন। আমিরুলের প্রত্যাশা, ষাঁড়টি ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। এ পর্যন্ত সাড়ে আট লাখ টাকা দাম উঠেছে। নামকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তুফান যেমন ঘন কালো হয়, ষাঁড়টিও তেমনি। তাই শখ করে তিনি ষাঁড়টির নাম দিয়েছেন কালা তুফান।
ষাঁড়টির নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন স্থানীয় পশু চিকিৎসক হিমেল রহমান। তিনি বলেন, তার হাতেই এই ষাঁড়ের কৃত্রিম প্রজনন হয়েছিল। শৈশব থেকে তিনি ষাঁড়টি লালনপালনে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। বর্তমানে ষাঁড়টি লম্বায় ৯ ফুট, উচ্চতা ৬ ফুট ও ওজন ১ হাজার ৩২৪ কেজি। পরিচর্যা করলে ষাঁড়টির ওজন ১ হাজার ৫০০ কেজি পর্যন্ত হবে বলে তিনি জানান। এ-জাতীয় ষাঁড় সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
আমিরুলের পাঁচ বছরের ভাতিজি নিশাত বলে, ষাঁড়টি বিক্রির কথা হচ্ছে। এটা শোনার পর থেকে তার মন খুব খারাপ। পড়ালেখার বাইরে তার পুরো সময়টা কাটে ষাঁড়ের সঙ্গে। সে পিঠে উঠে বসলেও তুফান বিরক্ত বোধ করে না। ষাঁড়টিকে সে বড় ভাইয়ের মতো ভাবে। সূত্র: প্রথম আলো।