নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: হাতুড়ি আর লোহার টুংটাং শব্দে মুখরিত কামার পাড়া। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন চট্টগ্রামের কামাররা। চলছে হাঁপর টানা, পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। হাতুড়ি পিটিয়ে কামার শিল্পীরা তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম।
কঠোর লকডাউনে টানা ১৪ দিন দোকান বন্ধ থাকায় অসহায় হয়ে পড়েছিলেন তারা। লকডাউন শিথিল হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে কামার পাড়ায়। হাতুড়ি দিয়ে লোহা পিটিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
কোরবানির ঈদ আর মাত্র চারদিন বাকি। এ চার দিনেই কামারিদের যত রোজগার। তাই ঈদের দিন পর্যন্ত চলবে তাদের এমন ব্যস্ততা। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তাদের জিনিসপত্রের কেনা-বেচা বেড়ে যায়। এ থেকে অর্জিত টাকায় সারা বছর সংসার চালান। বছরের বেশিরভাগ সময় অল্প কাজ করে অল্প টাকা নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় কামার শিল্পীদের। তাই তারা এ সময়টাকে কাজে লাগান।
নগরের চকবাজার এলাকার তেলিপট্টির কামার সঞ্জয় কর্মকার বলেন, কোরবানির ঈদে আমাদের রাতদিন ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। এ সময়টাই আমরা কিছু টাকা উপার্জন করি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। বছরের এই ঈদ মৌসুমটাই আমাদের মূল টার্গেট থাকে। বছরের কয়েকটা দিন ভালো টাকা, ভালো উপার্জন করার চিন্তা করলে এই দিনগুলা ঘিরেই করা হয়। গত ঈদে কয়েক হাজার টাকা উপার্জন হলেও কারিগরদের বেতন দিয়ে খুব একটা থাকেনি। ভেবেছিলাম কোরবানি কেন্দ্র করে বেশি অর্ডার আসবে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন একেবারেই ভিন্ন।
সরেজমিন দেখা যায়, কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য যাবতীয় সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। নগরের জেল রোড সংলগ্ন লালদীঘির পাড়ে বাপ-বেটা মিলেই কামারের দোকান পরিচালনা করেন। বাপ লোহা ধরে আছেন ছেলে হাতুড়ি নিয়ে পেটাচ্ছেন। তাতেই তৈরি হচ্ছে চকচকে দা, ছুরি, চাপাতি, বটি, চাকু। দম ফেলার সময় নেই তাদের।
বর্তমানে প্রতিটি দা তৈরিতে প্রকারভেদে মজুরি নেওয়া হচ্ছে ২৫০-৬০০ টাকা পর্যন্ত। চাকু তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ১২০ টাকা। বড় ছুরি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৫০০-৭০০ টাকা। বটি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা।
নগরের ফিরিঙ্গি বাজার। দোকানের নাম ‘মা জননী’। সেখানেই পারিবারিক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন দশম শ্রেণি পড়ুয়া সীমান্ত দাশ। বাবা উপন কুমার দাশ ও মা ববিতা রানী দাশকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করছেন ছেলে সীমান্ত। কোরবানির ঈদে কাজের চাপ বেশি থাকায় সময় দিচ্ছেন তিনি। প্রায় ৬০ বছর ধরে তার পরিবার এ কাজের সঙ্গে যুক্ত।
সীমান্ত বলেন, আমার জ্যাঠা-জ্যাঠুও এ কাজে যুক্ত, তবে তারা আলাদাভাবে কাজ করেন। আমার দাদাও এ কাজ করতেন। বাবা ৩০ বছর ধরে করছেন। সবমিলিয়ে ৬০ বছরের পুরোনো ব্যবসা আমাদের।
তিনি আরও বলেন, খদ্দেরই নেই, বেচাকেনা কম। আর মাত্র চারদিন পর ঈদ। এ সময়ে জমে ওঠার কথা দা-বটির বাজার, অথচ এবার বিক্রিই নেই। ক্রেতারা আসছেই না। এখন ঈদ এগিয়ে আসতে আসতে যদি বিক্রি কিছুটা বাড়ে, সেই লক্ষ্যেই থেমে না থেকে একের পর এক জিনিসপত্র তৈরি করছি।
কোরবানির সরঞ্জাম কিনতে আসা নগরের অক্সিজেন এলাকার নয়ারহাটের বাসিন্দা মোহাম্মদ আরমান বলেন, কয়েকদিন পরেই ঈদ। গরু ও ছাগল জবাই দিতে মাংস কাটতে প্রয়োজন চাকু ও ছুরির। সে কারণে বাজারে এসেছি দা, বটি ও ছুরি কিনতে। আগের থেকে দাম সামান্য বেশি, তারপরও কিনছি।