নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে সংবিধান অনুযায়ী আইন তৈরির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।
মঙ্গলবার বিকেলে রাষ্ট্রপতির আহ্বানে বঙ্গভবনে যান ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা। সেখানে ইসি গঠনে আইন করা প্রস্তাবটি দেন দলীয় নেতারা।
বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সঙ্গে ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমদ বকুল, কামরূল আহসান, আলী আহমেদ এনামুল হক এমরান ও নজরুল ইসলাম হক্কানী।
সংলাপ শেষে বেরিয়ে এসে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
সংলাপে ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে ইসি গঠনে ৬টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
রাশেদ খান বলেন, ‘যদিও আইনমন্ত্রী বলছেন আইন প্রণয়নের যথেষ্ট সময় নেই, তবে পার্লামেন্টেই উদাহরণ আছে যে এর চেয়েও কম সময়ে আইন প্রণয়ন কেবল নয়, সংবিধানও সংশোধন হয়েছে। যেটা প্রয়োজন সেটা হল সংবিধানকে অনুসরণ করা। যদি একান্তই আইন প্রণয়ন না করা হয় তবে যে সার্চ কমিটি গঠনের কথা বলা হচ্ছে সেক্ষেত্রেও সার্চ কমিটির দেয়া নামগুলোর সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির যাচাই বাছাইয়ের পর রাষ্ট্রপতিকে পাঠাতে করতে হবে এবং তিনিই সেই তালিকা থেকে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করবেন।’
মেনন জানান, ওয়ার্কার্স পার্টি রাষ্ট্রপতিকে নাগরিক নেতাদের সঙ্গেও সংলাপ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুতেই এই আইন উত্থাপন করে জরুরি ভিত্তিতে তা পাস করা যেতে পারে। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত সংবিধান বর্ণিত বিধি পরিপূরণে আপনি (রাষ্ট্রপতি) সরকারকে এই নির্দেশ দিতে পারেন।
‘অন্যথায় প্রতিবারের মত এবারও নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক জন্ম দেবে এবং এ ধরনের আস্থাহীনতার পরিবেশে নির্বাচন কমিশন যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারবে না’-বলে উল্লেখ করে ওয়ার্কার্স পার্টি।
ওয়ার্কার্স পার্টি বলেছে, এই আইন অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারগণ নিয়োগের জন্য নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল থাকবে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলের নেতা, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে এই সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠিত হবে।
এই সাংবিধানিক কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য নাম প্রস্তাব করবেন। রাষ্ট্রপতি তাদের পরামর্শমত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগ করবেন।
আইন প্রণয়ন একান্তই সম্ভব না হলে বিকল্প হিসেবে যে সার্চ কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করা হচ্ছে সে ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারীদের নিয়ে তা গঠন করা যেতে পারে বলে প্রস্তাবনা দিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি।
দলটির প্রতিনিধিরা বলেন, সার্চ কমিটি তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতি পদে চার জনের নাম প্রস্তাব করবে।
সার্চ কমিটির দেওয়া নামের তালিকা সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটি বাছাই করে সেখান থেকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে। রাষ্ট্রপতি ঐ তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ দেবেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির অন্য প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে
# নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাই এর প্রতি তদ্রুপ মান্যতা ও মর্যাদা থাকতে হবে যাতে করে নির্বাচন পরিচালনা, তত্ত্বাবধানে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন পরিবেশে কাজ করতে পারে।
# সংবিধানের ১১৮ বিধি বাস্তবায়নার্থে আইনের বিধানাবলি অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি আইন তৈরি করতে হবে।
#নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সদস্যের মধ্যে দু’জন নারী সদস্য থাকবেন।
#নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী আইনসমূহের যথাযোগ্য প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
রাশেদ খান মেনন সংলাপ শেষে তার লেখা ‘এক জীবন প্রথম পর্ব স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ রাষ্ট্রপতিকে প্রদান করেন।
আরো পড়ুন: