নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: আলোচিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি-তে আরেক দেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান যমুনা গ্রুপ এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক বিনিয়োগ হবে ২০০ কোটি টাকা বলে মঙ্গলবার ইভ্যালির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এরপর ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে মোট এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে যমুনা গ্রুপ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কারণে আলোচনায় থাকা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির বাজার মূল্য (ভ্যালুয়েশন) প্রকাশ করেনি কোনো পক্ষ।
এই বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, “একটি দেশীয় উদ্যোগ হিসেবে আমাদের পাশে আরেকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে পেয়ে আমরা সত্যিই আনন্দিত। যমুনার এই বিনিয়োগ ধারাবাহিক বিনিয়োগের অংশ এবং পরবর্তী ধাপেও তাদের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এই বিনিয়োগ ইভ্যালির ভবিষ্যত উন্নয়ন এবং ব্যবসা পরিধি বৃদ্ধিতে ব্যয় করা হবে।“
গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়ে যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ না করা কিংবা অর্থ ফেরত (রিফান্ড) না দেওয়া এবং পণ্য সরবরাহকারী মার্চেন্টদের বকেয়া পরিশোধ না করায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইভ্যালির বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় সাম্প্রতিক সময়ে।
এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে তদন্তও চালাতে অনুরোধ করাসহ অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক, এনবিআর ও দুদকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ইভ্যালির কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে চিঠি দেওয়াসহ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটিকেও নোটিস দিয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার ইভ্যালি বিনিয়োগ পাওয়ার ঘোষণা দিল।
দিন কয়েকদিন আগে ফেইসবুকে লাইভে এসে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল বলেছিলেন, গ্রাহকের পুরোনো অর্ডার বাবদ যেসব মূল্য ফেরত প্রক্রিয়া চলছিল তা স্থগিত রাখা হবে। নতুন নিয়মে গ্রাহকদের হাতে পণ্যই তুলে দেবেন তিনি।
নতুন বিনিয়োগের আশ্বাস পেয়ে এ বিষয়ে তিনি আবারও বলেন, “পুরানো অর্ডার যেগুলো পেন্ডিং সেগুলোর ডেলিভারির ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিচ্ছি, প্রয়োজনে আমরা আরও বিনিয়োগের ব্যবস্থা করব।“
বিনিয়োগ নিয়ে যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলামের বরাত দিয়ে ইভ্যালির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নয়নে আমরা দেখছি যে, স্থানীয় ইকমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে আমাজন, চীনের ক্ষেত্রে আলিবাবা। তেমনি বাংলাদেশে ইতোমধ্যে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করেছে দেশীয় ই-কমার্স ইভ্যালি। শুধু দেশের সাধারণ মানুষের স্বপ্নপূরণে কাজ করে যাচ্ছে। যমুনা গ্রুপ দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে দেশ ও দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। এখন থেকে ইভ্যালি এবং যমুনা গ্রুপ সেই স্বপ্নপূরণে একে অপরের অংশীদার হল।“
বিজ্ঞপ্তিতে যমুনা গ্রুপের পরিচালক মনিকা ইসলামের একটি বক্তব্যও তুলে ধরা হয়।
মনিকা ইসলাম বলেন, “দেশের বাজারে মানসম্পন্ন পণ্য ও সেবা নিয়ে যমুনা গ্রুপ ব্যবসা করে আসছে। বাংলাদেশে সব থেকে বড় অফলাইন মার্কেটপ্লেস যমুনা ফিউচার পার্ক। আর এখন সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস গড়ে তোলার জন্য ইভ্যালির সাথে থাকবে যমুনা।
“ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং দেশের ই-কমার্স খাতকে একটা মজবুত অবস্থানে এগিয়ে নিয়ে যেতে ইভ্যালির সৎ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যের প্রতি বিশ্বাস রেখে তাদের দুঃসময়ে আমরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছি।”
ইভ্যালিতে বিনিয়োগের এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এল যখন প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দিক থেকে চাপের মধ্যে রয়েছে।
গ্রাহকের দায়-দেনা ও ব্যবসার ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলতে আগামী ১ অগাস্টের মধ্যে ইভ্যালি কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনার ধরন কেমন হবে সেই রূপরেখাও বৈঠকে উপস্থাপন করতে হবে।
এজন্য ঈদের আগে ১৯ জুলাই প্রতিষ্ঠানটিকে নোটিসের দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর জবাব যথাযথ না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে গত ১৬ জুন ইভ্যালি নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সেখানে বলা হয়, গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির গ্রাহকের কাছে ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকায় দেনা রয়েছে।
এসবের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পদের পরিমাণ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা। এরমধ্যে চলতি মূলধন রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩৭৩৬ টাকা।
ফেইসবুক লাইভে বাংলাদেশের ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন চার মাস আগেই তৈরি করা হয়েছিল জানিয়ে রাসেল দাবি করেন, এরপর ইভ্যালি অনেক লাভ করেছে, অনেক উন্নতি করেছে। ওই প্রতিবেদনে ইভ্যালির ‘ফিউচার ভ্যালুয়েশন’ করা হয়নি।