উদ্যোগ ও উদ্যোক্তাজাতীয়সর্বশেষ

ইভেনিং সার্জারি চালু করা হবে জানালেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য

ইভেনিং সার্জারি চালু করা হবে জানালেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভেনিং সার্জারি চালু করা হবে জানালেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য। (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, পেটের প্রদাহজনিত রোগ বা আইবিডি নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

দেশের একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ এ রোগে ভুগছেন। পরিপাকতন্ত্রের এ রোগের মাধ্যমে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। আইবিডি বা পেটের প্রদাহজনিত এ রোগ নিরাময়যোগ্য না হলেও চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং আগেভাগে রোগটি চিহ্নিত হলে ক্যানসার থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সকাল ৯টায় বিশ্ব আইবিডি দিবস উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের উদ্যোগে র‌্যালি-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ও শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

উপাচার্য তার বক্তব্যে বলেন, দেশে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের প্রথম সুপার স্পেশালাইজ হাসপাতাল চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। রোগীদের সুবিধার্থে ও চিকিৎসাসেবার পরিধি আরও বিস্তৃত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভিনিং শিফটে সার্জারির কার্যক্রম চালু করা হবে।
সেমিনারে ‘আইবিডি এক্সপেরিয়েন্স ইন বিএসএমএমইউ’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও আইবিডি ফ্রি ট্রিটমেন্ট ক্লিনিকের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য চিকিৎসক ও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ২০১৭ সাল থেকে ক্লিনিকটি পরিচালনা করছি। পেটের প্রদাহজনিত রোগ বা আইবিডি বলতে দুটি আলাদা রোগ আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রোনস ডিজিজকে বোঝায়। এই পাঁচ বছরে ৬১৭ জন রোগী নিবন্ধিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৯০ জন ক্রোনস ডিজিজ ও ৩২৭ জন আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগী রয়েছেন। মোট রোগীর ৬০ শতাংশ পুরুষ ও ৪০ শতাংশ নারী। রোগীদের প্রায় সবাই ২০-৪৫ বছর বয়সী। অর্থাৎ, তরুণদের মধ্যে রোগটির প্রকোপ বেশি। তবে একেবারে কম বয়স থেকে শুরু করে ৯০ বছর বয়সীদেরও এ রোগ হতে পারে। শহরের লোকজনের মধ্যে রোগটির প্রকোপ একটু বেশি হলেও গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যেই এ রোগের প্রবণতা কাছাকাছি। শ্রেণি বিবেচনায় গরিব ও ধনী রোগী সমান।

গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আনওয়ারুল কবীরের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. স্বপন কুমার তপাদার, শিশু গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. রোকুনুজ্জামান, কলোরেক্টাল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সাহাদত হোসেন সেখ, আইবিডি ক্লিনিকের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার রায় প্রমুখ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেন।

সেমিনারে ‘আইবিডি এক্সপ্রিয়েন্স ইন বিএসএমএমইউ’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও আইবিডি ফ্রি ট্রিটমেন্ট ক্লিনিকের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ। বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে বলা হয়, আইবিডি বা ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ হচ্ছে পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহজনিত দীর্ঘমেয়াদি রোগ।

এটা প্রধানত দুই ধরনের–আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রোনস ডিজিজ। আলসারেটিভ কোলাইটিস শুধু বৃহদন্ত্রে হয়ে থাকে। আর ক্রোনস ডিজিজ মুখ থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত পরিপাকতন্ত্রের যেকোনো স্থানে হতে পারে। পেটে ব্যথা, দীর্ঘদিন ধরে পাতলা পায়খানা, ওজন কমে যাওয়া ক্রোনস ডিজিজের প্রধান উপসর্গ। আর রক্তযুক্ত পাতলা পায়খানা হলো আলসারেটিভ কোলাইটিসের প্রধান উপসর্গ।

দৈনন্দিন খাবারে শাকসবজি ও ফলমূলের স্বল্পতা, ফাস্টফুড গ্রহণ, অপরিষ্কার পরিবেশে খাবার গ্রহণ, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, শারীরিক পরিশ্রম কম করা, স্থূলতা, অল্প বয়সে অতিমাত্রায় এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার, ধূমপান আইবিডি রোগের প্রধান কারণ। এ রোগ প্রধানত পাশ্চাত্যের হলেও বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর প্রাদুর্ভাব আগের তুলনায় বেশি। এটা তরুণ ও মধ্য বয়সের রোগ হলেও শিশু ও বৃদ্ধ বয়সেও দেখা দিতে পারে।

অধ্যাপক ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ উপস্থাপিত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগে ১৯৯০ সাল থেকে নিয়মিত আইবিডি রোগী দেখা হয়। প্রতি বৃহস্পতিবার আইবিডি ক্লিনিকে ৩০-৩৫ জন রোগীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে এ ধরনের রোগীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে জনসচেতনতার অভাবে আইবিডি রোগ বিলম্বে শনাক্ত হয়। যেমন, ক্রোনস রোগীদের ক্ষেত্রে চার বছর এবং আলসারেটিভ কোলাইটিসের ক্ষেত্রে দেড় বছর পর রোগী জানতে পেরেছেন যে তিনি আইবিডি রোগে আক্রান্ত। কিন্তু যথাসময়ে চিকিৎসা শুরু করার জন্য এ রোগটি আগেভাগেই চিহ্নিত হওয়া উচিত।

তিনি আরও জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিডি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান ছাড়াও দরিদ্র তহবিলের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *