আন্তর্জাতিক ডেস্ক, সুখবর ডটকম: ইউক্রেনকে চার বছরে ১ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার কর্মসূচি অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পরিষদ। রাশিয়ার ১৩ মাস ধরে চলা আক্রমণের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটির অর্থনীতির সহায়তায় বৈশ্বিক ১১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার প্যাকেজের অংশ হিসেবে শুক্রবার এই ঋণ কর্মসূচি অনুমোদিত হয়।

আইএমএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে কিয়েভকে তাত্ক্ষণিকভাবে প্রায় ২৭০ কোটি ডলার দেওয়ার পথ পরিষ্কার হলো। এই অর্থ ইউক্রেনের বিশেষ করে জ্বালানি খাতে উচ্চাভিলাষী সংস্কারের জন্য প্রয়োজন হবে। বিস্তৃত তহবিল সুবিধা (ইএফএফ) ঋণের মাধ্যমে আইএমএফ এবারই প্রথম বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া কোনো দেশের জন্য প্রচলিত অন্যতম প্রধান অর্থায়ন কর্মসূচি অনুমোদন করল। ইউক্রেনের জন্য আইএমএফের আগের ৫০০ কোটি ডলারের দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গত বছরের মার্চে বাতিল হয়ে যায়, সেসময় আন্তর্জাতিক এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিকে বেশকিছু শর্তে কিয়েভকে ১৪০ কোটি ডলার দিয়েছিল। অক্টোবরে ‘ফুড শক উইন্ডো’ কর্মসূচির আওতায় ইউক্রেনকে আরো ১৩০ কোটি ডলার দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। আইএমএফের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৈশ্বিক যে ১১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার সাহায্যের কথা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে আইএমএফের ঋণ ছাড়াও বিভিন্ন বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানের অনুদান ও রেয়াতযোগ্য ঋণের ৮ হাজার কোটি ডলার এবং ২ হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের ঋণ মওকুফের প্রতিশ্রুতিও আছে।

এজন্য ইউক্রেনকে আগামী দুই বছরের মধ্যে অবশ্যই রাজস্ব আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ, বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা অটুট রাখা এবং দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টা জোরদারের মতো সুনির্দিষ্ট অনেক শর্ত পূরণ করতে হবে। স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি ও যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন, যুদ্ধ-পূর্ববর্তী অর্থনৈতিক এবং আর্থিক নীতি কাঠামোতে ফিরে আসা, প্রতিযোগিতা বাড়ানো এবং জ্বালানি খাতের দুর্বলতা মোকাবিলা করার লক্ষ্যে ঋণ কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্বে গভীরতর সংস্কার দরকার হবে, বলেছে আইএমএফ। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, আইএমএফের এই ঋণ কর্মসূচি ‘সত্যিই মজবুত’ এবং এতে কেবল আগামী বছরের মধ্যেই ১৯টি অবকাঠামোগত মান অর্জনে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষগুলোর অঙ্গীকারও আছে। আইএমএফের প্রথম উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গীতা গোপীনাথ বলেছেন, ‘রাশিয়ার অব্যাহত আক্রমণ ইউক্রেনের অর্থনীতি ও সমাজে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।’ যুদ্ধের এই ব্যাপক চাপের মুখেও ‘সামগ্রিক সামষ্টিক অর্থনীতি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা’ বজায় রাখায় ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করেছেন তিনি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আইএমএফের এই ঋণ কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়েছেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা। এটি একসঙ্গে আমাদের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে, পাশাপাশি এর মাধ্যমে সামনে আমাদের চলার পথ আরো সুন্দর হবে এবং শত্রুরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমাদের জয় সুনিশ্চিত হবে।’  আইএমএফের এই ঋণ তহবিল নিশ্চিতে গত বছর ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করা মার্কিন অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন চলতি বছর আকস্মিক এক সফরে ইউক্রেনে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, আইএমএফের ঋণ ইউক্রেনের অর্থনৈতিক ও আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে এবং দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠনে ভিত্তি তৈরিতে সহায়তা করবে।

এমএইচডি/আইকেজে 

আরো পড়ুন:

ছয় নতুন প্রতিষ্ঠানে বিভক্ত আলিবাবা, ইতিবাচকভাবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *