আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়

দেবজ্যোতি দত্ত

ইম্যুনিটি নিয়ে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে কয়েকটি পর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা শেয়ার করতে চাই। আশা করি, সকলের জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস হিতকর হবে।

পর্ব ১: ইম্যুনিটি বাড়াতেঃ

১) আয়ুর্বেদ মতে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলে সবার আগে পেট ভালো রাখতে হবে।

ব্যাখাঃ পেট হলো সকল শক্তি, ও রোগ প্রতিরোধ শক্তির প্রধান উৎস। এইখান থেকে সকল শক্তি ও সাথে দোষ উৎপন্ন হয়।

করণীয়ঃ

ক) পেট পুরে খাবেন না

খ) ক্ষুধা না লাগলে খাবেন না

গ) প্রতি লিটার পানিতে আধা চামচ (২ গ্রাম) দারুচিনি গুড়া ও দুই টুকরো আদা ছেঁচে, (কয়েকটি তুলসি পাতা, যদি থাকে) ১০ মিনিট ফুটিয়ে সে পানি পান করবেন। (উষ্ণ পানি খেলে ভালো)

২) মাঝে মাঝে উপবাস বা রোজা থাকতে হবে।

ব্যাখাঃ মানুষের বিভিন্ন অনিয়মের কারণে শরীরের বিষ বেড়ে যায়। শরীরে টক্সিসিটি বেড়ে গেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

করণীয়ঃ

রোজায় বা উপবাসে অটোফেজি স্টেজে বিষ নষ্ট হয় এইটা সবার জানা।

৩) আয়ুর্বেদ এ চপনপ্রাশ পাওয়া যায়। এইটা সব যায়গায় পাওয়া যায়। এতে প্রায় ৬০ ভাগ আমলকি থাকে ও ৪৭ রকমের মেডিসিন থাকে। এইটা ন্যাচারাল ইম্যুন বুস্টার।

চপনপ্রাশ না পাওয়া গেলে প্রচুর (অন্তত ৪ থেকে ৬টা) আমলকি খেতে হবে। আমলকিতে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন-সি, এন্টিঅক্সিডেন্ট আরো মূল্যবান উপাদান থাকে।

৪) মধু ও কালোজিরা খুব ভালো ইম্যুন বুস্টার।

ব্যাখাঃ মধু ও কালোজিরা দুইটাই ঊষ্ণ প্রকৃতির। উষ্ণ প্রকৃতি হওয়ার কারণে শরীরে সব সময় মেটাবলিজম ঠিক রাখে। তাছাড়া মধু হজম ক্ষমতা বাড়ায়, কালোজিরা রক্ত বিশুদ্ধ করে ও জীবাণুমুক্ত করে।

৫) স্ট্রেস ও টেনশন নেওয়া যাবে না

ব্যাখাঃ স্ট্রেস ও টেনশনে মানুষের ইম্যুনিটি কমে যায়। এইটা ও সবাই জানি।

করণীয়ঃ আমাদের জন্মটাই একটা আশ্চর্য। এই সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সঠিক সুযোগ। এতে নিজেরও মন ভালো থাকে, অন্যেরও। সাথে বেশি বেশি ইবাদতে ডুবে যেতে হবে।

৬) দৈনিক কিছু সময় গায়ে রোদ লাগাতে হবে, রুমে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এর ব্যবস্থা থাকতে হবে।

ব্যাখাঃ এন্টি-ভাইরাল ও এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের আগে মানুষ রোগ প্রতিরোধ ও রোগ থেকে রক্ষার জন্য রোদের তাপ ব্যবহার করত। কারণ রোদের তাপ মানুষের মেটাবলিজম বাড়ায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। তাছাড়া ভিটামিন-ডি তো খুব ভালো ইম্যুন বুস্টার।

৭) বাচ্চাদের ইম্যুনিটি বুস্টারের জন্য এক চামচ মধুতে আধা চামচ ঘি মিশিয়ে খাওয়াবেন। সাথে অলিভ তেল দিয়ে শরীরে মালিশ করে দিবেন। চপন প্রাস (১ চামচ) ও খাওয়ানো যেতে পারে।

৮) এক জায়গায় অনেকক্ষণ বসে না থেকে হাঁটাহাঁটি হালকা স্ট্রেচিং ব্যায়াম করা যেতে পারে। (বেশি নয়)

ব্যাখাঃ এক জায়গায় অনেক্ষণ বসে থাকলে প্রোস্টেট গ্লান্ড ও মুত্রকৃচ্ছতার সমস্যা হতে পারে।

:: দেবজ্যোতি দত্ত, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাচেলর অব আয়ুর্বেদিক মেডিসিন এন্ড সার্জারি (তৃতীয় বর্ষ)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *