শিল্প ও বাণিজ্য

আমানত সংগ্রহ বাড়ছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: এখন শহরের মতো গ্রামের মানুষও ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতে পারছে। গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় এ সুবিধা নিয়ে এসেছে এজেন্ট ব্যাংকিং। মূলত, ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতেই এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হয়।

ব্যাংকের মতোই প্রায় সব সুবিধা পাওয়া যায় এ ব্যাংকিং এ। ফলে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ব্যাংকিংয়ের এ ধারা। করোনার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছিল দেশের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম। তবে পুনরায় চাঙ্গা হয়ে উঠেছে এজেন্ট ব্যাংকিং।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কার্যক্রম শুরুর মাত্র আট বছরেই এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ ১১ হাজার ৫৪১টি। এসব গ্রাহক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় জমা করেছেন সাড়ে ২২ হাজার ২৬১ কোটি টাকার আমানত। হিসাব অনুযায়ী, বছরের ব্যবধানে আমানত বেড়েছে ৭০ শতাংশ।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি ২৯টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের এজেন্ট সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৭০টি ও আউটলেটের সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৭টি। এসব এজেন্ট ও আউটলেটের মাধ্যমে খোলা হিসাবধারীদের অর্ধেকই নারী। তথ্য বলছে, এজেন্টদের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৩ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকার।

এক বছরের ব্যবধানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহ বেড়েছে ৯৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। কারণ গত (২০২০) বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ৩৮ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা রেমিট্যান্স এসেছিল এজেন্টের মাধ্যমে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে ৭৪ হাজার ৮৮৩ কোটিতে পৌঁছেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান হলো দেশের এজেন্ট আউটলেটগুলোর মধ্যে ২ হাজার ৩৫৮টি শহর এলাকায়, যা মোট আউটলেটের প্রায় ১৩ শতাংশ। বাকি ১৫ হাজার ৭১৯টি গ্রামে। ঋণ বিতরণের দিক থেকে শহর অঞ্চলে বিতরণ করা হয়েছে ৩৬ শতাংশ। বাকি ৬৪ শতাংশ বিতরণ হয়েছে গ্রামে।

আমানত সংগ্রহের দিক থেকে সবার ওপরে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। কারণ মোট আমানতের ৩৬ দশমিক ১৬ শতাংশ এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এর পরেই রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। মোট আমানতের ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ সংগ্রহ করেছে ব্যাংকটি। এছাড়া আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও অগ্রণী ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করেছে যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৭৬, ১৩ ও ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। মোট ঋণের ৬৪ শতাংশ বিতরণ হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে বিতরণ হয়েছে ১৭ শতাংশ। এছাড়া দ্য সিটি ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ হয়েছে যথাক্রমে ১১, ৪ ও ৩ শতাংশ।

এখন ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে। কারণ, কোন জায়গায় শাখা খুলতে হলে ব্যাংকের বড় খরচ চলে যায় ‘পজিশন’ নিতে বা স্টাবলিশমেন্টে। আর মাসে মাসে ভাড়া গোনার পাশাপাশি ব্যাংকের নিজস্ব স্টাফদের বেতন তো আছেই। এর বাইরে ব্যাংকের নতুন শাখা নেওয়ার ঝক্কি-ঝামেলাও আছে। এসব বিবেচনায় এজেন্ট ব্যাংকিং করতে বা এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া সহজ।

এক্ষেত্রে ব্যাংকের বাড়তি কোন খরচ করতে হয় না। সংশ্লিষ্ট এজেন্টই সমস্ত খরচ বহন করেন। ফলে এতে একদিকে কোন খরচ ছাড়াই ব্যাংকের লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যাও বাড়ছে কোন খরচ ছাড়াই। আর গ্রাহকরাও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খুললে পাচ্ছেন বিভিন্ন সার্ভিস।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব জায়গায় ব্যাংকের শাখা নেই সেখানকার মানুষ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের ব্যাংকিং প্রয়োজন মিটাতে পারছে। সাধারণ ব্যাংকিংয়ের মতো তাদের মোবাইলে লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য যাচ্ছে। ফলে তাদের বিশ্বাস বাড়ছে। এতে এ ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে গ্রামীণ জনগণ এ সেবাকে খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শুরু হয় ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে। এ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন এসেছে সেখানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ভূমিকা অন্যতম। এ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় আরো অনেক কিছু করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আর্থিক অন্তভু‌র্ক্তিতে এজেন্ট ব্যাংকিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এতে গ্রামের মানুষ ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে।

জানা গেছে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠী যারা ব্যাংকিং সেবা থেকে দূরে আছে তাদেরকে স্বল্প খরচে ব্যাংকিং সেবা দিতে প্রথমে চালু হয় মোবাইল ব্যাংকিং। এরপরেই একই উদ্দেশ্যে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবাও চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে ২০১৪ সালে ব্যাংক এশিয়া প্রথমে এ সেবা চালু করে।

এজেন্ট ব্যাংকিং হলো সমঝোতা স্মারকে চুক্তির বিপরীতে এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকিং সেবা দেওয়া। কোনো ধরনের বাড়তি চার্জ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

২০১৩ সালের প্রথম নীতিমালায় প্রথমে শুধু পল্লি এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমতি দেওয়া হলেও পরের বছর নীতিমালায় কিছুটা সংশোধন আনা হয়। সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী যেখানে ব্যাংকের শাখা নেই এমন পৌর ও শহর অঞ্চলেও এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া যায়। তবে মেট্রোপলিটন ও সিটি করপোরেশন এলাকায় না করার যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা আগের মতোই বহাল রাখা হয়।

এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, অ্যাকাউন্টে টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্হানান্তর (দেশের ভিতর), রেমিট্যান্স উত্তোলন, বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন প্রকার ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সব প্রকার ভর্তুকি গ্রহণ করা যায়।

এজেন্টরা কোন চেক বই বা ব্যাংক কার্ড ইস্যু করতে পারেন না। এজেন্টরা বিদেশি সংক্রান্ত কোন লেনদেনও করতে পারেন না। এছাড়া এজেন্টদের কাছ থেকে কোন চেকও ভাঙানো যায় না। এজেন্টরা মোট লেনদেনের ওপর কমিশন পেয়ে থাকেন।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশ এখন বিদেশি বিনিয়োগের আকর্ষণীয় স্থান : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *