ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: এটা তাপমাত্রার ওপর যতটা, তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে বাতাসের আর্দ্রতার ওপর। আমাদের শরীর অত্যধিক গরম সহ্য করার জন্য পদার্থবিদ্যার কৌশল মেনে চলে। মনে করুন, গরমে ভূমি বা এমন কোনো তল থেকে পানি বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে গেল। পানি বাষ্পীভূত হওয়ার সময় ওই তল গরম হয় না, বরং শীতল থাকে।
একইভাবে যখন আপনার শরীর অত্যন্ত গরম হয়, তখন পানি পাম্প করে ত্বকে পৌঁছে দেয়, যেন তা বাষ্পীভূত হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় ত্বকের তাপমাত্রা বাতাসের তাপমাত্রার চেয়ে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। ফলে অত্যন্ত গরম কোথাও গিয়েও আমরা কষ্ট করে হলেও টিকে থাকতে পারি। সে ক্ষেত্রে ঘাম তৈরির জন্য ক্রমাগত পানি পান করে যেতে হবে।
ঘামলেও সেটা শুষ্ক বাতাসেই বরং ভালো। কারণ, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার গতি কমে যায়। ত্বক থেকে আর্দ্রতা বাষ্পীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি এসে জমে সেখানে। অর্থাৎ ঘামে যখন শরীর চটচট করে, তখন বুঝতে হবে আপনার শরীর শীতল হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত দ্রুততার সঙ্গে পানি বাষ্পীভূত করতে পারছে না, কিংবা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
একজন সাধারণ মানুষ সর্বোচ্চ কত ডিগ্রি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে, সে বিষয়ে ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সিডনির থার্মাল আরগোনোমিকস ল্যাবরেটরির একটি গবেষণাপত্র আছে। সেখানে বলা হয়েছে, ন্যূনতম পোশাকে অত্যন্ত শুষ্ক একটি কক্ষে (আপেক্ষিক আর্দ্রতা ১০ শতাংশ) বিশ্রামরত একজন মানুষ যদি ক্রমাগত পানি পান করে যান, তবে তিনি সম্ভবত সর্বোচ্চ ১১৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪৬ দশমিক ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রা পর্যন্ত সহ্য করতে পারবেন। এরপর ব্যাপারটি অত্যধিক তাপমাত্রার পর্যায়ে চলে যাবে।
আমরা কতখানি তাপ সহ্য করতে পারব, তা নির্ধারণ করে ঘাম কত দ্রুত আমাদের শরীর তা উৎপন্ন করতে পারে এবং কত দ্রুত তা বাষ্পীভূত হয়। ক্রমাগত পানি স্প্রে করে শরীর ভেজা রাখলে এবং বেশ শক্তিশালী ফ্যানের সামনে বসে থাকলে হয়তো বাষ্পীভূত হওয়ার গতি বাড়ানো যেতে পারে। এতে আরও বেশি তাপেও আপনার ত্বক ঠান্ডা থাকবে।
যেহেতু আমাদের দেহের তাপের সহনশীলতার মাত্রা আর্দ্রতার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে, সেহেতু এখানে বরং ‘ওয়েট-বাল্ব’ তাপমাত্রা নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। সাধারণ তাপমাত্রা এবং ওয়েট-বাল্ব তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য আছে। এটা মাপা হয় ভেজা কাপড়ে মোড়ানো থার্মোমিটার দিয়ে। অনলাইনে অনেক ধরনের ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়, যেখানে তাপমাত্রা এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা ইনপুট দিলে ওয়েট-বাল্ব তাপমাত্রা দেখাবে।
সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে ২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ওয়েট-বাল্ব তাপমাত্রায় মানুষের শরীর সর্বোচ্চ ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত সহ্য করতে পারে।