খোকন কুমার রায়:
“আমাদের দেশে হবে সেই নেতা কবে, আত্মপ্রচারে মন না দিয়ে কাজে মন দিবে।” – কুসুমকুমারী দেবী বেঁচে থাকলে হয়তো বর্তমানে এমনটাই লিখতেন!
মার্কেটিংয়ে একটা কথা আছে- “প্রচারেই প্রসার”। যত বেশি প্রচার করা যাবে, পণ্যের চাহিদাও তত বাড়বে। এ ধারণাটির ওপর ভিত্তি করেই নানান রকম চটকদার ও আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন তৈরি হয়। কিন্তু পণ্যের গুণগত মান যদি ভালো না হয় তাহলে বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে ক্রেতাগণ পণ্য কিনলেও পরবর্তীতে তা বর্জন করে এবং পণ্যের চাহিদা কমে যায় ও মার্কেট হারায়।
আমাদের নেতারাও যদি এ মার্কেটিং নীতিটি অনুসরণ করেন তাহলে কী হবে? যত চটকদার কথা ও প্রতিশ্রুতি দেন না কেন, যত ফটোগ্রাফি ও ফেসবুকিং করেন না কেন, জনগণ যখন আপনার ‘প্রকৃত দোষ’ জানবে তখন ভেজাল পণ্যের মতোই রাজনীতির মার্কেট হতে আউট হয়ে যেতে পারেন।
আমাদের অনেক নেতাই মনে হয় পণ্যের মতো আত্মপ্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত। দানে, ত্রাণে এবং নানান কর্মকাণ্ডে আমরা এমনটাই দেখতে পাই। তাদের হয়তো ধারণা, আয়োজন করে যেমন একটি পণ্যের বিজ্ঞাপন বানানো হয়, তেমনি নানান আয়োজনে, নানান জায়গায় সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে, কথা বলে এবং জনকল্যাণকর কাজ করার ভঙ্গিমায় ভিডিও করে, নানান প্রচার মাধ্যম যথা- টেলিভিশন, ফেসবুক, ইউটিউব প্রভৃতিতে ছেড়ে দিলেই বোধ হয় রাজনীতি অনেকটা পাকাপোক্ত হয়ে যাবে। তারা হয়তো ভুলে গেছেন, এই ডিজিটাল প্রচারণার যুগে জনগণও বোঝে বিজ্ঞাপনের ভাষা ও প্রকৃতি।
দেশে ইন্টারনেটের দুরন্ত গতিতে হাতে হাতে স্মার্ট মোবাইলে তারা দুনিয়ার অনেক বাস্তব ভিডিও এবং অভিনয়ের ভিডিও দেখে দেখে পোক্ত ও স্মার্ট হয়ে গেছে। কাজেই কোনটা বাস্তব আর কোনটা অভিনয় তা তারা সহজেই আলাদা করতে পারে।
তারপরও আপনার ডিজিটাল প্রচারণায় মুগ্ধ হয়ে যদি নেতা বানায় এবং প্রত্যাশিত কাজগুলো আপনার থেকে না পায় তাহলে নষ্ট পণ্যের মতোই ছুড়ে ফেলে দিতে পারে। পরে যত বিজ্ঞাপনই দিন না কেন, আপনার দিকে ফিরেও তাকাবে না, যার অনেক নজির রয়েছে।
অতএব, আসুন, শুধু অভিনয় ও আত্মপ্রচার না করে, প্রকৃতই জনগণের কল্যাণে কাজ করি। মানুষও উপকৃত হবে এবং আপনার ধারণকৃত ছবি, ভিডিও প্রভৃতি অন্যকে উৎসাহীত করবে।
শুধু আত্মপ্রচারকারী ভিডিও এবং ফটো তোলার মডেল না হয়ে জনকল্যাণের মডেল হয়ে ফটো তুলি এবং সম্মান ও ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যাই- এটাই প্রত্যাশা।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, ধূমকেতু.কম।