ধূমকেতু রিপোর্ট : আমদানির ওপর চাপ ছয় মাসে কমে আসছে। গত অর্থবছরে আমদানি বেড়েছিল ২৫ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে আমদানি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে। অন্যদিকে এসময়ে এলসি স্থাপনের ব্যয় কমেছে প্রায় ১১শ’ কোটি ডলার, যা ২৭ দশমিক ১২ শতাংশ। এর মানে, আগামীতে আমদানি ব্যয় কমে আসছে।
মূলধনী যন্ত্রপাতি, চাল, গমসহ বেশ কিছু পণ্যের আমদানি ব্যাপক কমছে। অবশ্য এত বেশি হারে এলসি কমার প্রধান কারণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম আমদানির জন্য গত বছর বড় ব্যয়ের এলসি খোলা হয়।
সংশ্নিষ্টরা জানান, গত বছরের ২০ নভেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সরঞ্জাম আমদানির জন্য সোনালী ব্যাংকে এক হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়। যদিও ওই এলসির পুরো দায় পরিশোধ হওয়ার কথা রাশিয়া থেকে।
তবে পণ্য আনা-নেওয়ার আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়াগত কারণে ওই এলসি খুলতে হয়, যা এলসির পরিসংখ্যানে ছিল। এ ছাড়া আকস্মিক বন্যায় গত বছর প্রচুর ফসলহানি হয়েছিল। এবার ফসল উৎপাদন স্বাভাবিক থাকায় গত বছরের মতো চাল আমদানির চাপ নেই।
আবার বছরজুড়ে ডলারের ওপর বাড়তি চাপ থাকায় বিলাসবহুল পণ্যের এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো কিছুটা কড়াকড়ি করেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে এলসি খোলার হার আগের বছরের তুলনায় কমছে। আমদানি চাপ কমে আসার প্রভাবে ছয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে। এ সময়ে ৭৬৬ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে, যা আগের একই সময়ে ছিল ৮৬৩ কোটি ডলার।
এ ছাড়া আলোচ্য সময়ে চলতি হিসাবে ঘাটতি কমে হয়েছে ৩০৮ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২ হাজার ৯৩২ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল চার হাজার ২৩ কোটি ডলার। এতে করে এলসি কমেছে এক হাজার ৯১ কোটি ডলার, যা ২৭ দশমিক ১২ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের ছয় মাসের মোট এলসির মধ্যে ‘অন্যান্য’ খাতে খোলা হয় এক হাজার ৫৬৮ কোটি ডলারের। এবারের ছয় মাসে কমে হয়েছে মাত্র ৪০৭ কোটি ডলার। ফলে শুধু ‘অন্যান্য’ খাতে এলসি কমেছে এক হাজার ১৬১ কোটি ডলার বা ৭৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের এলসি ‘অন্যান্য’ খাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
চলতি অর্থবছর চালের জন্য মাত্র তিন কোটি ৫৬ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে খোলা হয় ১৩৮ কোটি ডলার। ফলে এলসি কমেছে ৯৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। গমের এলসি ২৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ কমে ৭৬ কোটি ডলারে নেমেছে।
মূলধনী যন্ত্রপাতির জন্য এবার মাত্র ২৩৯ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, গত অর্থবছরের ছয় মাসে যেখানে খোলা হয় ৩২৯ কোটি ডলারের। অন্যান্য যন্ত্রপাতির এলসি ৩৩২ কোটি ডলার থেকে কমে ৩৩১ কোটি ডলারে নেমেছে। এ ছাড়া তেল, চিনি, পেঁয়াজ, ওষুধ, ফল, কাগজসহ বেশ কিছু পণ্যের এলসি কমেছে।
এলসি বাড়ছে যেসব পণ্যের : কিছু পণ্যের এলসি ব্যয় আগের চেয়ে বেশি। এর অন্যতম হলো- শিল্পে ব্যবহূত কাঁচামালের জন্য এবার ৩৬১ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে খোলা হয় মাত্র ১৯২ কোটি ডলারের এলসি।
টেক্সটাইল কাপড় ও এক্সেসরিজের এলসি ৩৩০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৩৯২ কোটি ডলার হয়েছে। কেমিক্যালের এলসি ১৫১ কোটি ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬৯ কোটি ডলার। সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকারের এলসি মাত্র ৩০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে এক লাফে ১৩২ কোটি ডলার হয়েছে।