নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত। ভেঙ্গে পড়েছে অর্থনীতি। বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে বাণিজ্য। করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের বাণিজ্য খাত বিপদে পড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চীনের পণ্য ব্যবহার করে না দেশে এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক- সব ঘরেই ব্যবহার হয় চীন থেকে আনা পণ্য। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে স্থবির চীনের জনজীবন। বন্ধ হয়ে গেছে উৎপাদন; আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য।

চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চীন যে দামে পণ্য দেয় তা অন্যান্য দেশে তিন থেকে চারগুণ বেশি দাম পড়ে। এতে ক্রেতারা বেশি দামে কিনতে আগ্রহী হবেন না। তবে এবার হঠাৎ করে যে বিপদে পড়েছে চীননির্ভর গোটা বিশ্ব, তা থেকে বেরিয়ে আসার একটা বিকল্প পথ নিয়েও চিন্তা করছেন সবাই। যাতে করে ভবিষ্যতে আবার এমন কোনো বিপর্যয় দেখা দিলে মুষড়ে পড়তে না হয় বিশ্ব অর্থনীতিকে।

চীনে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস ছড়াতে শুরু করে গত ডিসেম্বর মাসে। ৩১ ডিসেম্বর চীন সরকার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। শুরুটা হয়েছিল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে। সেখানে ২৩ জানুয়ারি থেকে সবকিছু বন্ধ করে দেয় চীন সরকার। বাংলাদেশ কতটুকু চীননির্ভর, তা দেখা যায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রাথমিক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে। এটি তৈরি করেছেন কমিশনের সদস্য মোস্তফা আবিদ খান।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৫ হাজার ৬০৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যার ২৫ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। যদি মোট আমদানি থেকে জ্বালানি ও খাদ্য বাদ দেয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ, মধ্যবর্তী পণ্য ও অন্যান্য পণ্যের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীলতা অনেক বেশি।

বাংলাদেশে ২৫ ধরনের পণ্য ও ২৫ ধরনের কাঁচামাল অথবা মধ্যবর্তী পণ্যের মোট আমদানি এবং সেখানে চীনের অংশ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ নির্ভরতা চীনের ওপরে। যেমন তুলা থেকে উৎপাদিত সুতা ও সমজাতীয় পণ্যের (এইচএস কোড নম্বর ৫২) ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মোট আমদানি ৫২০ কোটি ডলার, যার ৫৪ শতাংশ আসে চীন থেকে। বৈদ্যুতিক সামগ্রী ও সরঞ্জাম, ইস্পাতের বিভিন্ন উপকরণ, আসবাবের সরঞ্জাম, জুতা ও সমজাতীয় পণ্য, খেলনা ইত্যাদি ১৫টি পণ্যের বিকল্প বাজার কী হতে পারে, তা–ও দেখানো হয়েছে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে। যদিও সেসব বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা কম আমদানি করেন। যেমন ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বৈদ্যুতিক সামগ্রী ও সরঞ্জামের ৫৭ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। দ্বিতীয় বড় উৎস ভারত, হিস্যা মাত্র ৭ শতাংশ। জার্মানি ও ইতালি থেকেও আসে। কিন্তু ইউরোপীয় পণ্যের যে দাম পড়ে, তা কেনার সাধ্য সাধারণের নেই।

চীনের বিকল্প পাওয়া দুষ্কর বলে মনে করেন ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য মোস্তফা আবিদ খান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ চীন থেকে ভোগ্যপণ্য কম আমদানি করে। বেশি আসে মধ্যবর্তী পণ্য ও কাঁচামাল, যা ছাড়া কারখানা চালানো যায় না। এ ক্ষেত্রে সরবরাহে কোনো বিঘ্ন ঘটলে বাংলাদেশের শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হবে, সেটা রপ্তানিমুখী শিল্পের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী কারখানার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।’

এক দৈনিককে দেওয়া মতামতে তিনি বলেন, ‘চীনের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি খুব বেশি নয়। কিছু কিছু খাত হয়তো সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না বলে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব বেশি হতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে।’

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, দাম কম-বেশি হলেও বিপদের সময়ে কিংবা জরুরি পরিস্থিতিতে যাতে পণ্যের সরবরাহ লাইন ঠিক থাকে সেদিকে বিশ্বকে নজর দিতে হবে। এবারের দুর্যোগ কাটিয়ে উঠলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সুনিশ্চিতভাবেই সে বিষয়ে গুরুত্ব দেবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *