আইন আদালত

আমজাদ কীভাবে দেশ ছেড়ে পালালেন জানতে চায় হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন দেশ ছেড়ে কীভাবে বিদেশে পালিয়েছেন, তা আজ দুপুরের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীকে এ তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

‘দেশ ছাড়লেন সাউথবাংলা ব্যাংকের আমজাদ’শিরোনামে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। ওই বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। পরে আদালত দুদকের আইনজীবীকে তিনি কীভাবে দেশ ছাড়লেন তার বিস্তারিত জানাতে নির্দেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। শুনানিতে আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, আসামি দেশ ত্যাগ করে চলে গেলেন আর আপনারা নীরব দর্শক হয়ে দেখছেন। যেখানে দুদক আছে, বিএফআইইউ আছে, ডিবি আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, তারপরও তিনি কীভাবে পালিয়ে যান। হাই কোর্ট বলে, মামলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা আছে, তদন্তও হচ্ছে- তারপরও কীভাবে তিনি দেশ ত্যাগ করলেন? এ সময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ইয়েস মাই লর্ড, দুদকের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তিনি কীভাবে চলে গেলেন। মাই লর্ড, আমরা সব সময় ট্রান্সপারেনড, আমরা কাজ করছি। হাই কোর্ট বলে, বুঝলাম তো আপনারা কাজ করছেন, তাহলে গেলেন কি করে। কি পদক্ষেপ নিলেন। তিনি কীভাবে দেশ ছাড়লেন। দুদকের আইনজীবী বলেন, এ নিয়ে আমার অফিসের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কথা না বলে কিছু বলতে পারব না।

নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে হাই কোর্ট বলে, তাহলে এটা আমাদের জানান, তার বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা ছিল কি না? আর নিষেধাজ্ঞা থেকে থাকলে তিনি গেলেন কীভাবে। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি কাজ করল। তাকে কেন ধরতে পারল না। আসামিরা যদি এভাবে পালানোর সুযোগ পেয়ে যায় তাহলে আমরা তো আর বিচারে থাকতে পারব না। এর আগে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাউথবাংলা ব্যাংকের বিদায়ী চেয়ারম্যানের বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন। স্থল সীমান্ত দিয়ে ৭ নভেম্বর ভারত হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। তার সঙ্গে স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ এবং মেয়ে তাজরির আমজাদও রয়েছেন। আমজাদ হোসেনের দুর্নীতির কারণে সম্প্রতি তার সব ব্যাংক হিসাব জব্দ (অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ) করে আদালত। এ ছাড়া সাউথবাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে তিনি সরে যেতে বাধ্য হন। বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন। ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- চার দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন আমজাদ হোসেন। আমেরিকা, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতে একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। পাচার করা বিপুল অঙ্কের অর্থে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রাসাদ গড়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন কোম্পানি খুলে তিনি টাকা সরিয়েছেন। সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের খুলনা সদর ও কাটাখালী শাখা ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানি ও ঋণের আড়ালে নানা দুর্নীতি, অনিয়ম, জালিয়াতির মাধ্যমে আমানতকারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন আমজাদ হোসেন। আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকে নতুন করে আরও ৮২৯ কোটি টাকা জালিয়াতির তথ্য মিলেছে।

এর কিছুদিন আগে আরও ৪৩০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ ছিল। এর অনুসন্ধানও শুরু হয়েছে। সবমিলিয়ে তার জালিয়াতি করা অর্থের পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে ৯ কর্মচারীর নামে তার ২৫ কোটি টাকা ঋণ তুলে আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পর আমজাদ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৯৩৫টি ব্যাংক হিসাব জব্দের (ফ্রিজ) আদেশ দেয় আদালত।

আরো পড়ুন:

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *