ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: সংকটে জর্জরিত দেশ আফগানিস্তানে সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসার অবকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল৷ করোনা মহামারির ফলে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগও কমে গেছে৷ এই অবস্থায় টেলিমেডিসিন প্রযুক্তি কাজে লাগছে৷
দূরে বসেই চিকিৎসা সম্ভব
গোলামরেজা তার বৃদ্ধ বাবা আলি হুসেনকে বামিয়ান কেন্দ্রীয় হাসপাতালে টেলি-চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছেন৷ আফগানিস্তানের মধ্যভাগে পাহাড়ি ও দরিদ্র এই প্রদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ খুবই কম৷ গোলামরেজা বলেন, ‘‘আমি আমার বাবাকে চিকিৎসার জন্য দু’বার কাবুলে নিয়ে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু সেখানে ভালো ফল পাইনি৷ আমরা গরিব এবং অর্থ ব্যয় করেও আমরা সঠিক ফল পাইনি৷ এখন আমরা বামিয়ান কেন্দ্রীয় হাসপাতালে ফিরে এসেছি৷”
তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিকিৎসা সেবা দেয়ার নাম টেলিমেডিসিন৷ এর ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরা মোবাইল ফোন ও ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন৷
আফগানিস্তানের অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির মতো বামিয়ান কেন্দ্রীয় হাসপাতালেও চিকিৎসার ক্ষমতা ও ব্যবস্থা অত্যন্ত সীমিত৷ সম্ভবত ক্যামেরা টিমের কল্যাণে এই বৃদ্ধ মানুষটি হুইলচেয়ার পেয়েছেন৷ না পেলে তাঁকে পায়ে হেঁটে এগিয়ে যেতে হতো৷ বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের মতো আফগানিস্তানেও দরিদ্র মানুষের জন্য সুযোগের দ্বার সহজে খোলে না৷
তাদের অনেককেই অপেক্ষা করতে হয়৷ কাবুলের ফরাসি হাসপাতালের এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বৃদ্ধ মানুষটিকে পরীক্ষা করেছেন৷ রোগী জানালেন, তার হাত ও পা অসাড় হয়ে গেছে৷ প্রায় এক বছর ধরে তার এই দশা৷ তিনি ঠিকমতো শরীর নড়াচড়া করতে পারেন না৷ মাথা ও হাতের মতো শরীরের কিছু অংশ কাঁপছে৷
এবার রিমোট পরীক্ষার পালা৷ ফরাসি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ক্যামেরার মাধ্যমে রোগীর সঞ্চালন দেখে নিলেন৷ তারপর রোগ নির্ণয় করলেন তিনি৷ বামিয়ানের ডাক্তারদের সঙ্গে তিনি একমত৷ অর্থাৎ, রোগীর শরীরে পার্কিনসনিজম ও পার্কিনসনস রোগের লক্ষণ রয়েছে৷ বামিয়ান কেন্দ্রীয় হাসপাতালের ডাক্তার মনে করেন, এমন ক্রনিক রোগের কারণে এই সব ওষুধ খেলে ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হবে এবং কাঁপুনি কমে যাবে৷
যুদ্ধ ও নিরাপত্তার অভাব আফগানিস্তানের সব অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে৷ মানুষ চিকিৎসা পরিষেবার নাগাল পাচ্ছে না৷ টেলিমেডিসিন বিভাগের প্রধান ড. হোমায়ুন রসুলি বলেন, ‘‘টেলিমেডিসিনের তিনটি ইতিবাচক দিক রয়েছে৷ মানুষ সময় নষ্ট করে না, অর্থেরও অপচয় করে না এবং স্বাস্থ্য খাতে বিশেষজ্ঞদের পরিষেবা পায়৷ আমাদের লোকজন গরিব, কাবুলে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারে না৷ সড়কপথে যাত্রাও নিরাপদ নয়৷ এভাবে ভ্রমণ করতে যারা ভয় পায়, আমরা এমন অনেকের চিকিৎসা করি৷ সামগ্রিকভাবে গরিব পরিবারগুলির জন্য এটা একটা ভালো ব্যবস্থা হয়েছে৷”
যেভাবে টেলিমেডিসিন প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে আফগানরা
হাজার হাজার আফগান প্রতি বছর ভারত, পাকিস্তান ও ইরানে চিকিৎসা করাতে যান৷ কিন্তু করোনা মহামারির শুরু থেকে সে সব দেশে ভ্রমণের সুযোগ আর নেই বললেই চলে৷ বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে৷
করোনা সংকটের কারণে আফগানিস্তানের হাসপাতালগুলির ক্ষমতা আরও সীমিত হয়ে পড়েছে৷ কিন্তু কর্মকর্তারা ‘ডিসটেন্স লার্নিং’ কর্মসূচির মাধ্যমে বিদেশি ডাক্তারদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন৷ বামিয়ান প্রাদেশিক হাসপাতালের প্রধান ড. ফারুগ আমিরি বলেন, ‘‘আমাদের কিছু কর্মসূচির মাধ্যমে বিষয় চিহ্নিত করে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে আমাদের সহকর্মীদের জন্য অনলাইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে৷”
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও চিকিৎসার লক্ষ্যে আফগানিস্তানের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সবার আগে দেশের হাসপাতালগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে তারপর বিদেশি চিকিৎসাকেন্দ্রগুলির বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ করিয়ে দিতে চাইছে৷ আফগানিস্তানের কমপক্ষে ১৫টি প্রদেশে টেলিমেডিসিন সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে৷