নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের সামর্থ্য ও শক্তি অসীম নয়। নির্বাচন কমিশন অসীম ক্ষমতার অধিকারী নয়। সংশ্লিষ্ট সবাই এগিয়ে না এলে, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহযোগিতা না করলে সবিনয়ে বলব, আমাদের ক্ষমা করবেন। আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব, আপনারা সবাই মিলে দেশের ডেমোক্রেটিক প্রসেস রিস্টোর (গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধার) করুন।
আমরা একটি সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে জাতিকে সুশাসন ও ভালো সংসদ উপহার দেওয়ার চেষ্টা করব। ’
গত রবিবার শপথ নেওয়ার পরের দিন গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চার নির্বাচন কমিশনার (ইসি)। দুপুরে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিইসি। এ সময় তাঁর সঙ্গে নতুন চার নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশিদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর, আনিছুর রহমান ও ইসিসচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও আমরা কি তাদের চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাব না? রাজনীতিতে কোনো কথাই শেষ নয়। আমাদের দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে আবদার, বিনয়, অনুনয় করার। উনারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞানী, অনেক বেশি অভিজ্ঞ। আমরা অনুনয়-বিনয় করব, আপনারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করুন। চুক্তিবদ্ধ হোন, নির্বাচনটা সুন্দরভাবে পরিচালনা করবেন, নির্বাচনে সহিংসতা থাকবে না, কেউ কাউকে বাধা দেবে না। ’
আমলানির্ভর সরকারের সুবিধাভোগী নির্বাচন কমিশন ও দিনের ভোট রাতে হওয়া প্রসঙ্গে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমি কি রাতে গিয়ে ভোটবাক্স চুরি করে ভোট দেব? নাকি দেখেও না দেখার মতো থাকব? আগে রাতে হতো কি না জানি না। আমি অস্ট্রেলিয়ায় বসে দিনে ভোট দিয়েছি। ’
নির্বাচনে বিরোধী পক্ষের এজেন্ট না থাকা প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘এজেন্টদের তাড়িয়ে দিলে আমাদের জানাতে হবে। তাদের সেখানে অবস্থান করতে হবে। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। আস্থা দুর্বল হলে আমরাও দুর্বল হয়ে পড়ব। ’
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা কতটা সৎ বা অসৎ ছিলাম, কতটা দায়িত্বপূর্ণ ছিলাম বা দায়িত্বহীনভাবে কর্তব্য পালন করেছি—সেটি পরে মূল্যায়ন করতে পারবেন। যাঁরা নির্বাচন করবেন, তাঁদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব কমিশনের। কর্মপদ্ধতি কী হবে, সেটি ঠিক করিনি। সাংবিধানিক শপথ অনুযায়ী, দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করব। নির্বাচন বিশাল কর্মযজ্ঞ, বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা রয়েছে। ’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘মাঠ ছেড়ে গেলে হবে না। মাঠে থাকবেন। ইউক্রেনের জেলেনস্কি পালিয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু পালাননি। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধ করে যাচ্ছেন। নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরে গেলে হবে না। কর্মীদের কেন্দ্রে থাকতে হবে। আমরা চাই দ্বান্দ্বিক মাঠ। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। আমি অস্বীকার করব না, ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা আমাদের দেখতে হবে। আমরা সামর্থ্য ও দক্ষতা অনুযায়ী আরোপিত দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। ’
বিএনপির নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন ইসি করে না। নির্বাচনের সময় একটা সরকার থাকে। কোনো না কোনো সরকার থাকবেই। এখন যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা আছে, সেটা মেনেই আমরা চেষ্টা করব। ’
ইভিএম প্রসঙ্গে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে, সেটি এখনই বলতে পারব না। আমরা ইভিএমের ভালো-মন্দ আলোচনা করব। ব্যালটের ভালো-মন্দও দেখব। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। ’
সিইসি আরো বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ইসি একা তৈরি করতে পারে না। রাজনৈতিক নেতৃত্ব—আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি মিলিয়েই কিন্তু হয়।