শৈশব-কৈশোর

আন্তর্জাতিক পত্রলিখন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী নুবায়শার হাতে স্বর্ণপদক হস্তান্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: আন্তর্জাতিক পত্রলিখন প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ১৯২টি দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকারি সিলেটের নুবায়শা ইসলামের হাতে ৬ নভেম্বর বিকালে ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন-এর স্বর্ণপদক হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এই উপলক্ষ্যে ডাক অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে নুবায়শার হাতে এই পদক তুলে দেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান অনলাইনে এই অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন এবং ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অনুষ্ঠানে এসময় উপস্থিত ছিলেন।

এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বিরল কৃতিত্বের জন্য নুবায়শা ইসলাম, তার বাবা-মা এবং শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের গর্বের অনেক কিছু আছে। আন্তর্জাতিক পত্রলিখন প্রতিযোগিতায় নুবায়শার অর্জন আমাদের নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি একটি সাম্য সমাজ বিনির্মাণে সকলকে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান। মন্ত্রী সামাজিক শৃংখলা ও ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি এই ধরনের একটি কর্মসূচির জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং ডাক অধিদপ্তরের ভূমিকার প্রশংসা করেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী নুবায়শার নিকট ইউপিইউ এর স্বর্নপদক হস্তান্তর একটি ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে বাংলাদেশ ইউপিইউ এর সদস্যপদ অর্জন করে। নুবায়শা আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে সেই ইউপিইউ-এর ৫০তম পত্র লেখন প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক অর্জন করে জাতি হিসেবে আমাদের গর্বিত করেছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।

মন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ কর্মসূচির পথ বেয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বাংলাদেশের বীজ বপন করেছিলেন। কিন্তু পঁচাত্তর-পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশকে থমকে দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ বছরের জঞ্জাল পরিষ্কার করে কম্পিউটারের ওপর ভ্যাট ট্যাক্স মওকুফ, ৪টি মোবাইল অপারেটরকে লাইসেন্স প্রদান ও ভিস্যাটের মাধ্যমে অনলাইন ইন্টারনেট সেবা চালু করাসহ যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর রোপন করা বীজটিকে চারাগাছে রূপান্তর করেন। গত ১২ বছরে আজ তা মহিরূহে রূপান্তরিত হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির হাত ধরে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান বলেন, ১৯২টি দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতায় কেবল নুবায়শাই জিতেনি, জিতেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের শিশুরা সবকিছু পারে তা প্রমাণ করেছে নুবায়শা।

গত ৯ অক্টোবর বিশ্ব ডাক দিবসে ঢাকায় ডাক ভবনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাবা-মাসহ নুবায়শা ইসলামকে তার কৃতিত্বের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন এবং অভিনন্দন স্মারক হস্তান্তর করেন।

অনুষ্ঠানে সিলেটের পুলিশ কমিশনার মোজাম্মেল হক এবং সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

নুবায়শা ইসলাম বিশ্ব ডাক সংস্থার (ইউপিইউ) ৫০তম চিঠি লেখা প্রতিযোগিতায় লক্ষাধিক কিশোর-কিশোরীকে হারিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার পেয়েছে। প্রতিযোগিতায় পত্র লেখার বিষয় ছিল ‘কোভিড-১৯’। নুবায়শা তার অনাগত বোনকে নিয়ে লেখা চিঠিতে করোনাকালে মৃত্যুভয়, স্বজন হারানোর ভয়ের কথা উল্লেখ করে। একই সঙ্গে প্রচণ্ড আশাবাদ ব্যক্ত করে একটি ভালো সময়ের জন্য।

নুবায়শার পরিবার সিলেট নগরীর পূর্ব শাহী ঈদগাহ এলাকায় বসবাস করে। তাদের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ধর্মগড় ইউপির আমবাড়িয়া গ্রামে। গত ২৭ আগস্ট সুইজারল্যান্ডে সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রতিযোগিতার ফল ঘোষণা করা হয়। ফল প্রকাশের পর বিশ্ব ডাক সংস্থা নুবায়শাকে নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করে প্রতিষ্ঠানের ইউটিউব চ্যানেল এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।

আরো পড়ুন:

কন্যাসন্তানদের জন্য মাসিকবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে বাবাদের নিয়ে কর্মশালা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *